শান্তির বার্তা ছড়িয়ে ঢাকায় বিশ্ব আশেকে রাসুল সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : দেশ–বিদেশের লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে ঢাকার আরামবাগে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখ্যাত সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক, বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর ৭৬তম শুভ জন্মদিনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিনব্যাপী এই মহাসম্মেলন সম্পন্ন হয়।
দেশব্যাপী মাজার, দরবার, খানকা–সহ সুফিবাদীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সব বিভেদ ভুলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার ডাক দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)। আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ দেওয়ানবাগী হুজুরের উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমানে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
সম্মেলনে দেশবরেণ্য আলেম, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা একত্রিত হন। এ সময় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে সুফিবাদের শান্তিময় দর্শন এবং দেওয়ানবাগী হুজুরের জীবনব্যাপী সংগ্রামের নানা দিক।
বক্তব্যে ইমাম কুদরত এ খোদা স্মরণ করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য দেওয়ানবাগী হুজুরের অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার কথা। পরবর্তীতে মানুষকে রিপুর দাসত্ব থেকে মুক্ত করে পবিত্র জীবনের পথে পরিচালিত করতে জীবনভর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
কুদরত এ খোদা বলেন, “সারা পৃথিবী দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলার বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছে; কিন্তু তিনি কখনোই সুফিবাদের শান্তির বাণি প্রচার বন্ধ করেননি।”
সুফিরা এই অঞ্চলের মানুষকে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন উল্লেখ করে কুদরত এ খোদা বলেন, যারা আল্লাহর অলীদের মাজার ভাংচুর করছেন, তারা ইসলামের সঠিক চরিত্র ধারণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, চরিত্রবান হতে হলে আল্লাহর অলীদের কাছে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। পরীক্ষায় পাস করতে যেমন শিক্ষকের কাছে যেতে হয়, তেমনি আল্লাহকে পেতে আল্লাহর অলীদের কাছে যেতে হয়।
“ধর্ম মানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মোহাম্মদী ইসলাম হলো চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা—সততা, সত্যবাদিতা, সৎ পথের প্রতি অঙ্গীকার এবং অন্যায়–জুলুম থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা,” যোগ করেন ইমাম কুদরত এ খোদা।
আল্লাহর এই অলী বলেন, “দেওয়ানবাগী হুজুরের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা বর্তমান বিশ্বের শতাধিক দেশে প্রচারিত হচ্ছে এবং এই শিক্ষা গ্রহণ করে কোটি মানুষ নিজেকে চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলছেন।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, নজরুল গবেষক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. পিয়ার মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান, জাতীয় আইন কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান মিয়া, মুফাসসিরে কোরআন ও মুহাদ্দিস এমরান হোসাইন মাজহারী এবং মুফাসসিরে কোরআন হযরত ফখরুদ্দিন রাজি।
ভোর সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে মোরাকাবা, মিলাদ, হামদ–নাত, জুম্মার নামাজ, দোয়া–মোনাজাত, ইসলামী আলোচনা, গবেষণাধর্মী বক্তব্য ও স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করা হয়। আয়োজনে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধার প্রবল স্রোতধারা সৃষ্টি হয়; সম্মেলন প্রাঙ্গণ ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইয়া হাবিবআল্লাহ্’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মরণ করেন হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর জীবনদর্শন ও আদর্শ, যা অসংখ্য মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে। তাঁরা বলেন, মানুষ কীভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে—সেই পদ্ধতি এই মহামানব সারাজীবন শিক্ষা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা হুজুর ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ইমাম সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর কাছে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হন এবং খেলাফত লাভ করেন। পরে ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগে দরবার শরিফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘দেওয়ানবাগী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
পরবর্তীতে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১টি দরবার এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে সহস্রাধিক খানকা ও জাকের মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর চারটি প্রধান শিক্ষা—আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা—আজও এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে।
২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইন্তেকালের আগে দেওয়ানবাগী হুজুর তাঁর মেজো ছেলে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা হুজুরের কাছে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও দরবার পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। সমাজসেবামূলক সংগঠন কদর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কুদরত এ খোদা বর্তমানে তাঁর পিতার পথ অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী সুফিবাদের শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।



