বাংলাদেশ

আই ডাব্লিউ আর প্রকল্পে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

এস.এম হুমায়ুন কবির, কক্সবাজার থেকে : ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অধীনে পরিচালিত আই ডাব্লিউ আর প্রকল্পের WASH (Water, Sanitation & Hygiene) কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠপর্যায়ের উপকারভোগী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পে কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে, যা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী—প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মিজানুর রহমান, প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আহসান সাব্বির এবং মনিটরিং অফিসার শহিদুল ইসলাম কিছু ঠিকাদারকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন এবং এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম সংঘটিত হয়।

স্থানীয়রা দাবি করেন—প্রকল্পে অনিয়ম প্রকাশ পেতে শুরু করলে বিনা অপরাধে এক ইউনিয়ন সুপারভাইজারকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু করে ইতিমধ্যে , যাতে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিষয়গুলো আড়ালে থাকে।

 

টিউবওয়েল স্থাপনে বোরিং–বিল নিয়ে গুরুতর অনিয়ম অভিযোগকারীদের দাবি—অনেক টিউবওয়েলে একবারও পানি ওঠেনি, তবুও ‘কার্যকর’ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
৫২০–৫৩০ ফুট বোরিং করে ৭০০–৮০০ ফুট দেখিয়ে অতিরিক্ত বিল তোলা হয়েছে।সেলু টিউবওয়েলের ২০০ ফুট বরাদ্দ থাকলেও অনেক স্থানে ৯৫/১১০/১৩০ ফুট বোরিং করে ২০০ ফুট দেখানো হয়েছে।তারার ব্র্যান্ডের গর্দান বা মাথা ব্যবহার না করে কমদামি উপকরণ লাগিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।অসম্পূর্ণ টিউবওয়েলকে ‘সম্পন্ন’ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।একজন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দার ভাষ্য—একেকটি টিউবওয়েলে লাখ টাকার বিল দেখানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কাজের মান ন্যূনতমও হয়নি।

স্যানিটেশন (ডাবল চেম্বার টয়লেট) খাতে অনিয়ম স্থানীয়দের অভিযোগ—মোটর ও পানি সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ টয়লেটে পানি সংযোগ দেওয়া হয়নি।ব্যবহৃত উপকরণ ও নির্মাণমান বাস্তবে নিম্নমানের হলেও বিল–ভাউচারে সর্বোচ্চ মান দেখানো হয়েছে।
কিছু স্থাপনা দৃশ্যমানভাবে ত্রুটিপূর্ণ হলেও রিপোর্টে ‘সেরা মান’ উল্লেখ করা হয়েছে।

হাইজিন কার্যক্রমে জাল স্বাক্ষর ও জালিয়াতির অভিযোগ অভিযোগ অনুযায়ী—হাইজিন কিট বিতরণ, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা সভায় অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নামে জাল স্বাক্ষর করা হয়েছে।বিল–ভাউচারে এমন ব্যক্তিদের নাম রয়েছে যারা কোনোদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন না।অনেক উপকারভোগীর নামে কাগজে স্বাক্ষর থাকলেও তারা বাস্তবে কিছুই পাননি।এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রজেক্ট অফিসার মৌমিতা বিশ্বাস অনেকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উপকারভোগীদের ভাষ্য—আমাদের নামে স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে, কিন্তু আমরা কোনো উপকরণ পাইনি। এগুলো প্রজেক্ট অফিসারের দুর্নীতির ফল।

উপকরণ কম দামে কিনে বেশি দামে দেখানোর অভিযোগ স্থানীয়দের অভিযোগ—প্রোগ্রামের জন্য কেনা বিভিন্ন উপকরণ বাজারদরের চেয়ে বহু গুণ বেশি দামে ক্রয় দেখানো হয়েছে।একই উপকরণে কয়েকগুণ মূল্য দেখিয়ে ভুয়া বিল–ভাউচার তৈরি করা হয়েছে।এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বিপুল বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

মনিটরিং প্রক্রিয়ায় গাফিলতি ও ভুয়া রিপোর্ট
অভিযোগ অনুযায়ী—মনিটরিং অফিসার নিয়মিত মাঠে যাননি।অসম্পূর্ণ এবং নিম্নমানের কাজকেও ‘সম্পন্ন’ হিসেবে রিপোর্ট করা হয়েছে।
মাঠ পরিদর্শন ছাড়াই অনেক জায়গায় অগ্রগতির ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি
রিপোর্ট প্রস্তুত হওয়ার সময় পর্যন্ত—মিজানুর রহমান প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর,আহসান সাব্বির প্রজেক্ট ইন্জিনিয়ার,শহিদুল ইসলাম মনিটরিং অফিসার অথবা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কারও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের দাবি—অভিযোগ উঠার পর তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

স্বচ্ছ তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জাপান সরকারের অর্থায়নে ২০২৩ সালে রামু উপজেলার চারটি ইউনিয়নে—
ফতেখাঁরকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া— আই ডাব্লিউ আর প্রকল্প চালু হয়।

স্থানীয়দের দাবি—প্রকল্পের সব খরচ, সাইট যাচাই, বোরিং–বিল, হাইজিন কিট বিতরণ, উপকরণ ক্রয়সহ পুরো কার্যক্রমের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি ও আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনা উচিত।ভবিষ্যতে কোনো দাতা সংস্থার অর্থ যেন দুর্নীতিবাজদের কাছে অপব্যবহার না হয়—এ জন্য কঠোর নজরদারি জরুরি।

স্থানীয়দের বক্তব্য—এই দুর্নীতি প্রমাণ হলে উপকারভোগীদের ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনি দাতা সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থাও নষ্ট হয়েছে। সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Related Articles

Back to top button