ট্রাম্প ও মামদানির বৈঠক

টাইমস ২৪ ডটনেট: সেদিন তারা দুজন আবাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন, স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত জটিল বিধানগুলো নিয়ে বিতর্ক করেছেন এবং কীভাবে একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদ্যুতের খরচ কমাতে রাজি হবে, তার পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। তারপর তারা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরটিতে আবাসন নির্মাণের প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে কথা বলেছেন।
এগুলোই ছিল নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে নবনির্বাচিত জোহরান মামদানি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার সাম্প্রতিক আলোচনার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। গত শুক্রবার তারা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন।ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান মামদানি। তিনি হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইং হয়ে বৈঠকস্থল ওভাল অফিসের দিকে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তিন সহযোগী–জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মরিস কাৎজ, প্রেসসচিব ডোরা পেকেক এবং তার চিফ অব স্টাফ এলে বিসগার্ড–চার্চ। বৈঠকের বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি এসব তথ্য দিয়েছেন।
তবে জোহরান মামদানির সঙ্গে থাকা তিন সহযোগীর মধ্যে শুধু এলে বিসগার্ড-চার্চই ওভাল অফিসের ভেতর ঢুকতে পেরেছেন। ভেতরে ছিলেন ট্রাম্প এবং তার চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস।গত রোববার সিএনএনকে জোহরান বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় মূলত নিউইয়র্ক নগরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটি আমাদের দুই পক্ষেরই প্রাধান্যের বিষয়।’
বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প জোহরানকে কেবিনেট রুমে নিয়ে যান। এই কক্ষে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের ছবি রয়েছে। জোহরান এবং ট্রাম্প ছবির সামনে পোজ দেন। ট্রাম্প ছবি তোলার সময় হাসছিলেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুল তুলে তার চিরচেনা ভঙ্গিমা দেখাচ্ছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোহরান মৃদু করে হাসলেন।গত শুক্রবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহারান মামদানির সঙ্গে বৈঠক হওয়াটা অত্যন্ত সম্মানজনক।’ মামদানির সঙ্গে তোলা তার কিছু ছবিও পোস্ট করেন ট্রাম্প। বৈঠকের পর ছবিগুলো তোলা হয়েছিল।
বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা প্রবেশের জন্য ওভাল অফিসের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এরপর ট্রাম্প ও মামদানি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ট্রাম্প ডেস্কে বসে বসে কথা বলছিলেন। আর জোহরান মামদানি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রাম্প তার প্রশংসা করেন।ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয়ে একমত, যা আমি ভাবতেও পারিনি।’দুই সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে বৈঠকটি ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে, যা অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, এর আগে কয়েক মাস ধরে তারা দুজন একে অপরের সমালোচনা করে আসছিলেন।
জোহরান বলেন, বৈঠকের সময় তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে অভিবাসন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কারণ, অন্য শহরের মতো করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্কে অভিবাসনবিরোধী অভিযান জোরদার করবেন কিনা, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।অভিবাসনবিরোধী অভিযান না চললেও নগরে ফেডারেল সরকারের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিউইয়র্কে গ্রেফতার এবং নিশানা করে অভিযান চালানোর সংখ্যা বেড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, অভিবাসীবিষয়ক অধিকার সংস্থাগুলো সংগঠিত হতে শুরু করেছে। তারা মানুষকে অধিকার সচেতন করে তুলতে ‘আপনার অধিকার সম্পর্কে জানুন’ শীর্ষক পুস্তিকা বিতরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।জোহরান সিএনএনকে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সীমারেখার মধ্যে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের সহযোগিতা করে যাবে।নিউইয়র্ক ‘স্যাংকচুয়ারি সিটি’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ এ ধরনের সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলোকে সীমিত আকারে সহযোগিতা করে। নিয়ম অনুযায়ী, তারা বড় আকারে সহযোগিতা করতে বাধ্য নয়। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শুধু প্রবল বা গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকে।পূর্ববর্তী সময়ে আদালত ও নগরের রাস্তা থেকে মানুষকে জোরপূর্বক আটক করার বিষয়ে ট্রাম্পের কাছে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, এতটা বেশি অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে গত শনিবার প্রেসিডেন্টকে তার আগের অবস্থান থেকে সুর নরম করতে দেখা গেছে।
এর আগে ট্রাম্প নিউইয়র্কে ফেডারেল সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তবে গত শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি কেবল তখনই ফেডারেল সহায়তা পাঠাবেন, যখন শহরটি সত্যিই এর প্রয়োজন বোধ করবে।
নিউইয়র্কে অভিবাসন বিষয়টি কীভাবে সামাল দেবেন, তা নিয়ে ট্রাম্প তার সঙ্গে একমত হয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলেননির জোহরান।নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে নিজের কথা বলার সুযোগ দেব। তবে আমি স্পষ্ট করেছি, জননিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। জানি, প্রেসিডেন্ট ও আমার মধ্যে মতপার্থক্য আছে এবং থাকবে। তবে আমি সব সময় এই শহরকে নিজের ঘর বলে মনে করা প্রতিটি মানুষের পক্ষে কাজ করে যাব।’
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পর জোহরান শনিবার পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করেছেন। ইসরাইল সরকারের কঠোর এ সমালোচক ভার্জিনিয়াতে একটি ফিলিস্তিনি রেস্তোরাঁয় নৈশভোজও করেছেন। গতকাল রোববার তিনি নিউইয়র্কে ফেরেন।
জোহরান রোববার ব্রঙ্কসে ইউনিয়ন গ্রোভ মিশনারি ব্যাপটিস্ট চার্চে সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘কাজ করাটা আমার দায়িত্ব। আর সে দায়িত্ব পালন করতে গেলে আমাকে যে কারও সঙ্গেই কাজ করতে হবে। এর অর্থ হলো, যারা আমার প্রার্থিতার বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যারা ভিন্ন দল করেন তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং যাদের সঙ্গে আমার গভীর মতবিরোধ রয়েছে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এর আগে রোববার সকালে ট্রাম্পকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন জোহরান মামদানি। ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুসুলভ বৈঠকের পরও এমন অবস্থান প্রকাশ করেন তিনি। এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে জোহরানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি এখনো ট্রাম্পকে ফ্যাসিবাদী মনে করেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতে যা কিছু বলেছি, তাতে আমি অটল থাকব। এ বিষয়ে আমি আগেও হ্যাঁ বলেছিলাম। আজও আমি তাই বলছি।’



