মতামত

গানে গানে আর কথায় কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন

সৈয়দা রাশিদা বারী

ও: আ: শিল্পকলা গেলামরে

কবি স্টালিনকে পেলামরে
সাহিত্য সংস্কৃতির প্রধান তিনিইযে
ও ও ও …
সাহিত্য লেখার উৎস সেইযে
(আমার) সংস্কৃতি চর্চার উৎস সেই যে।।

যার মনের মাঝে গবেষণা
হৃদয়েতে কবিতা মালা
তার দেইখা নাটক লেইখা (আমি) তার লাইগা গল্প লেইখা
বইয়ের পাতা সাজায়রে।।

যিনি বই মেলায় আসতেন
ভালো লিখতে বলতেন
সেই থেইকা গজল লেইখা
(আমি) তার লাইগা গান লেইখা
হারমোনিয়াম বাজায়রে।।

১৯.১১ ২০২৫ ইং, রাত ৮টা, বুধবার।

বাংলাদেশ জুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রিয় কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন সাহেবের জন্মদিন ২২ নভেম্বর। এই উপলক্ষে রোমান্স কর স্মরণিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে! শুনে ধুম ধারাক্কায় নিজে নিজেই ঘরের ভিতর উপরন্ত গানটি গাইলাম। না লিখেই আগে গাইলাম। পরে কাগজস্থ করলাম। যেন অনুষ্ঠানের ফিতা কাটা কেক কাটা বা উদ্বোধনের শুরুতেই গানটি আমি ১৮-২০ বছর পূর্বের আমি হয়ে গাচ্ছি! মানে কত বছর পিছনে ফিরে গিয়ে গাইছি, যখন অল্প বয়সী ছেলে মানুষের মতন লাফাতে নাচতে গাইতে গাছের ডালে চড়তে, গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ৮চালা টিনের ঘরের চালে উঠতে পারতাম! এরকম একটা সময়ে ফিরে গিয়েছি মনে হচ্ছিলো! নায়ক নায়ক বলছি না তবে অসম্ভব সুন্দর চেহারার, ভদ্র সৃজনশীল অমায়িক ব্যবহারের স্টালিন ভাইয়াকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি জানি। জন্ম স্থান কুষ্টিয়ার পাশের জেলা ঝিনাইদহ। কিন্তু আমি তাকে পাই সুন্দর এক পরিবেশে বাংলা একাডেমির বই মেলা চত্বরে। বলা যায় ভাবনায় পিছনের সেই দিনের কাছে ফিরে যাওয়া, ওরকম একটা শুভক্ষণ সময়, আমাকে আকৃষ্ট করে তার জন্ম দিবস পালন হবে জেনে! মাত্র কয়দিন আগেই তো শিল্পকলা একাডেমিতে তার সাথে আবার দেখা হলো। এখন তিনি কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন। দীর্ঘদিন ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটে তখনো আমি সেখানে উনার কাছে গিয়েছি। আমার স্বপ্নের দেশ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার জন্য শুভেচ্ছা বাণী তখনো নিয়েছি। তিনি বই বেরিয়েছে এমন নতুন লেখকদের সাক্ষাৎকার নিতেন, বাংলা একাডেমীর বইমেলায়। বাংলা একাডেমীর নিজস্ব এরিয়া অর্থাৎ অবস্থানরত অফিসের প্রাচীরের মধ্যেই হত ফেব্রুয়ারির বইমেলা। এখানে তখন শিক্ষা সংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের বিনোদন স্থল হিসেবে সার্বিক পর্যায়ের মানুষের কাছে টানতো। মন কেড়ে ঘরের বাহির করে আনতো লেখক প্রকাশক ছাড়াও বইপ্রেমিক পাঠক এবং নানান সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের। বইমেলা তখন সব বয়সের মানুষে কানায় কানায় ভরে যেত। তবে মানুষের গায়ের সাথে গা ইচ্ছার বাইরে লেগে গেলেও অমার্জিত কিছু ঘটতো না! আপত্তিকর বিভ্রান্তিকর কোন পরিবেশ ভুলেও হয়নি কখনো! এটা আর কি গর্বের বিষয়। ওই সব সময়ই বিশিষ্ট কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন সাহেবকে আমার জানার সুযোগ হয়, তিনিও আমাকে জানলেন। উনিও মানে রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন ভাইয়া থাকতেন বইমেলার মধ্যমণিই বলা যায়। কেননা নতুন লেখকদের মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য তিনি ছিলেনা এক নিষ্ঠ। কখনো লেখক প্রকাশকদের সাক্ষাৎকার। কখনো নতুন বউয়ের মোরক উন্নোচনের বিষয়ে! সবার হৃদয় মন চোখ সেই পানেই থাকতো‌। নতুন লেখকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কালে উনার উপস্থাপনা চেহারা এবং মধুর কন্ঠস্বর ও ব্যবহার, সবাইকে আকৃষ্ট করেছে! লেখক প্রকাশক ছাড়াও সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আগমন ঘটতো। স্টালিন সাহেবের পিছনে বড় বড় সকল কবি সাহিত্যিক ঝুঁকে পরেছেন! সেই গণ্ডির ভিতর আমি অধমও সিরিয়াল নিয়েছি! কি সেই আনন্দ ঘন পলাশ ফোটা কোকিল ডাকার দিন! এখন খুব একটা যাওয়া হয় না, আগের মতন পরিবেশ পাই না, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা চলে যাওয়ার পর থেকে, নিরাপত্তা বিবেচনায় আমার যেতে মন টানে নাই। আমি আর তেমন করে বই প্রকাশ করি না এবং যায় না! তবে এই বার দেখা যাক চেষ্টা করব নতুন বই দেবার এবং পূর্বের মতন যাওয়ার। পূর্বের দিনগুলোই আমার বইমেলায় টানে এবং স্বপ্নের মত লাগে। লাগে মধুময়। সালাম সালাম হাজার সালাম শহীদ ভাইয়ের স্মরণে গান গাওয়ার দিন! প্রায় প্রায় এক পাজা বই আমি, বাংলা একাডেমিতে চাকুরি রত মীর ভাইয়ের রুমে নির্ভয়ে রেখে, হালকা পাতলা ভাবে লেখক কুঞ্জে অপেক্ষায় অধীর থেকেছি! সত্যিই ফেব্রুয়ারির সেই সব দিন ছিল আমার জীবনে ঈদ আনন্দ! তখন বইমেলা আমার জন্য সিকিউরিটি সম্পন্ন শান্তির স্থান ছিলো। আমার বাংলাবাজারও সিকিউরিটি সম্পন্ন শান্তির স্থান মনে হতো। বাংলাবাজার বাংলা একাডেমি বইমেলা, কাটাবন নিউমার্কেট কবি সাহিত্যিকের জন্য আনন্দ আর শান্তির স্থান। যেন মিলন মেলায় পরিণত হতো। আমি অনেক নিরাপত্তা ফিল করতাম বিধায় ভালো লাগতো। এবং যেতাম। তাই বই প্রকাশ করার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে কাজ করতাম। মানুষ যেমন ঈদের দিনের আনন্দের জন্য একটি বছর প্রতীক্ষা করে। সঞ্চয় করে অর্থ করি গুছিয়ে রাখে। ঈদের সরঞ্জাম ঈদের পোশাক কিনবে বলে। আর আমি করতাম ফেব্রুয়ারির মাসব্যাপী ঈদের ইমেজ ভালোলাগায় আকৃষ্ট দিনগুলোর জন্য প্রতীক্ষা ১১টি মাস। ১১টি মাস যেন ১১টি বছর, প্রতীক্ষা করতে এমন লাগতো! যা কিছু অর্জন পয়সা কড়ির বিষয় ছিলো, কোনদিন ভালো শাড়ি চুড়ি গয়না আমাকে টানে নাই! গাড়ি বাড়ি পাবার স্বপ্ন দেখি নাই। নিজের লেখা নতুন বই হাতে পাব, বইমেলায় যাব, এই আনন্দই আমার ছিল সব। তাই জন্যই দাদী নানির ভাত রান্না করার সময়ে মুশটির চাউল উঠিয়ে রাখার মতন আমি তখনকার শিকি আদলি থেকে এক টাকা দুই টাকা যখন যা পেতাম জমিয়ে রাখতাম। আর এগারো মাস পরে, সেই পয়সাই প্রতিদিন বইমেলায় যেতাম। চাইতাম ১২ মাস বইমেলা থাক! কিন্তু ফেব্রুয়ারির বইমেলার দিনগুলো দম না ফেলতে ফেলতেই চলে যেত!! আবার ১১ টি মাস অপেক্ষার পালা। মাঝের দিনগুলো বই প্রকাশ করার জন্য নতুন লেখা মাতাল হয়ে লিখতাম! বইমেলাটা আমাদের লেখকদের জন্য অনেক ভালো লাগার একটা জায়গা। লেখক পাঠক প্রচ্ছদ শিল্পী কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক সম্পাদকদের মিলন মেলা। স্টালিন ভাইয়ের কাছে আমি বইমেলার ছাড়া যখন নজরুল ইনস্টিটিউটেও গিয়েছি। প্রথম দেখেছি তিনি একজন আপাদমস্তকে সাহিত্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি আমি তার সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডে এবং ব্যবহারে। নম্র ভদ্র সুশান্ত। আজ এখন বর্তমান শিল্পকলা একাডেমিতেও পেলাম দেখলাম। আবার লেখার অফারও পেলাম। খুবই ভালো লাগছে। তার শুভজন্ম দিবস পালন সফল হোক। মহান আল্লাহ পাক সুস্থ রাখুন। আগামীর দিনগুলো আরো আলো ময় জ্যোতিময় করুন প্রিয় কবি, প্রিয় নাম, রেজাউদ্দিন স্টালিন সাহেবের জন্য। আমিন।
২০.১১.২০২৫ইং, রাত ২.৩০ মি: বৃহস্পতিবার।

Related Articles

Back to top button