নদীপথে শত বছরের স্মৃতি নিয়ে ‘পি এস মাহসুদ’ আজ থেকে আবারও যাত্রা শুরু করল

টাইমস ২৪ ডটনেট : উদ্বোধন করেছেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
মাখদুম সামি কল্লোল:
বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল—শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পি এস মাহসুদ’—দীর্ঘ তিন বছর পর আবারও নিয়মিত সার্ভিসে ফিরল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
শনিবার ১৫ নভেম্বর সকালে রাজধানীর সদরঘাটে স্টিমারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঐতিহ্যবাহী এই জলযানকে আধুনিক রূপে পর্যটন সার্ভিস হিসেবে চালুর মধ্য দিয়ে দেশের নদী-সংস্কৃতি নতুন করে আলোচনায় এল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী এনডিসি, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. সলিম উল্লাহ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
“নদীই ছিল বাঙালির জীবনরেখা” উদ্বোধন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন–“পি এস মাহসুদ শুধুই একটি স্টিমার নয়—এটি বাংলাদেশের নদীজ ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, একসময় নদীই ছিল আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।”
তিনি জানান, নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকে এগিয়ে নিতে সরকার আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক স্টিমার—পি এস অস্ট্রিচ, পি এস লেপচা ও পি এস টার্ন—সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানান, ২১ নভেম্বর থেকে ‘পি এস মাহসুদ’ নিয়মিতভাবে ঢাকা–বরিশাল রুটে পর্যটন সার্ভিস হিসেবে চলবে। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ছাড়বে সদরঘাট থেকে, রাতে পৌঁছাবে বরিশাল। শনিবার বরিশাল থেকে ফেরত আসবে ঢাকা।
নদীপথের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ বাড়াতে দিনের আলোয় যাত্রার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তিতে ঐতিহ্যের নতুন রূপ, স্টিমারটির শতবর্ষী নকশা অক্ষুণ্ণ রেখে ইঞ্জিন, ফায়ার সেফটি, নেভিগেশন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নবায়ন করা হয়েছে। জিপিএস, ডিজিটাল নেভিগেশন, লাইফবোটসহ আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
স্টিমারের মুখ্য সুবিধাসমূহ—প্রথম শ্রেণির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন, ২২টি কেবিনে ৪৪ যাত্রীর আবাসন
ডেকে ৫০ আসনের তৃতীয় শ্রেণির ব্যবস্থা, কম ধোঁয়া নির্গমনকারী ইঞ্জিন, ২৫ জন প্রশিক্ষিত নাবিক ও কর্মকর্তার ক্রু-টিম থাকছে মাহসুদে।
নৌপরিবহন সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী বলেন, “এটি শুধু ভ্রমণ নয়—নদীজ ঐতিহ্যকে অনুভবের সুযোগ। দেশি খাবার, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও প্রয়োজনে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা থাকায় এটি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হবে।”
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ট্যুর পরিকল্পনা রয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয় জানায়, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের নৌ-ঐতিহ্য ও জাহাজ নির্মাণ ইতিহাস জানাতে ‘পি এস মাহসুদ’ দিয়ে বিশেষ শিক্ষা-ভ্রমণ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই স্টিমার একসময় নদীপথের প্রধান বাহন ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া সেই ইতিহাসকে আবারও জীবন্ত করে তুলল ‘পি এস মাহসুদ’–এর পুনরায় চালু হওয়া। দেশে নদীভিত্তিক পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হলো এই উদ্যোগে।



