তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজিতে বছরে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি
তদুর্ধ্ব’ শব্দের ফাঁদে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

মাখদুম সামি কল্লোল: সিগারেটের মূল্য নির্ধারণে ‘ও তদুর্ধ্ব’ শব্দগুচ্ছকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে। বিদ্যমান তামাক কর কাঠামোর এই দুর্বলতার কারণেই কোম্পানিগুলো একই মূল্যস্তরের ভেতর একাধিক ব্র্যান্ড বাজারজাত করে বাড়তি মুনাফা করছে—ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমছে কোটি কোটি টাকা।
এই তথ্য উঠে এসেছে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল টকশোতে। ‘সিগারেটের মূল্য নির্ধারণে তদুর্ধ্ব এর ব্যবহার ও তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর (বিইআর) সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহিম খলিল। তাঁর গবেষণায় দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দটি যুক্ত থাকায় কোম্পানিগুলো একই মূল্যস্তরের মধ্যে মাঝারি দামের সিগারেট বাজারে আনছে। ফলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি প্যাকেটে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা। কিন্তু এই অতিরিক্ত মূল্যের ওপর কোনো কর আরোপ না থাকায় সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
বিএনটিটিপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, “বর্তমান তামাক কর কাঠামো জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দটি এই কাঠামোকে আরও বিভ্রান্তিকর করেছে। কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদেরকে অধিক মূল্যে সিগারেট বিক্রয়ে বাধ্য করছে, ফলে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।”
তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা ইসলাম বলেন, “একই মূল্যস্তরের ভেতর নতুন ব্র্যান্ড আনলে ভোক্তারা কম দামের দিকে ঝুঁকতে পারে, ফলে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে না। এতে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।” তিনি তামাক কর আদায় ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক সুশান্ত সিনহা বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করছে। ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দের সুযোগ নিয়ে দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করছে। আগামী বাজেটের আগে এসব নীতিগত ত্রুটি চিহ্নিত করে সংশোধন জরুরি।”
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস. এম. নাজের হোসেন বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু দুর্বল নীতি সিগারেট কোম্পানিগুলোকে কর ফাঁকির সুযোগ দিচ্ছে। এনবিআর সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যম তামাক কোম্পানির আইন লঙ্ঘনের খবর প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না—ফলে কোম্পানিগুলো আইনের ফাঁক গলেই সুবিধা নিচ্ছে।”
নাজের হোসেন তামাক কোম্পানির অপকৌশল বন্ধে সরকার ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।



