মতামত

জনস্রোতে ভাসছে বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক

সৈয়দা রাশিদা বারী: নিঃসন্দেহে বলা যায়, জনশ্রোতে ভাসছে নিষ্পাপ নির্ভেজাল একজন ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি, এদেশের বাংলার বাঘ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক (২৭.১০. ১৮৭৩-২৬.০৪.১৯৬২ইং)। কেননা দেখা যায় সরকারি উদ্যোগ ছাড়াই, যে দিন উনার জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস হয়, ব্যক্তিগতভাবেই সাধারণ বহুজন কর্তৃক নানান ভাবে ছাড়াও ফেসবুকে বিনম্র শ্রদ্ধার ঢল নামে! মনে হয় যেন আষাঢ়ে পূর্ণিমার ঢল, বৃষ্টিপাত হচ্ছে, মনের আঙিনায় উনাকে ভেবে সেরকম! দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় যে, জন্ম দিবস মৃত্যু দিবস তো আলাদা কথা। এসব দিবস ছাড়াও সচেতন প্রাণ সার্বিক পর্যায়ের জ্ঞানী গুণী মানুষের কাছে উনি আলাদা ধরনের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব! কথা বলতে গেলেই তাই ওনার উদ্ধৃতি তুলে ধরে! মনে বাসা বেধে আছে অর্থাৎ মনে ওঠে বলেই তুলে ধরে! ছোটবেলায় পড়েছি এবং জেনেছি ধান নদী খাল এই দিনে বরিশাল। সেখানেই নদী এবং খালে বিলে ভরা, নানান মাছের সমালোহে, মাছে ভাতে বাঙালি, এই পরিবেশে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জনসাধারণের প্রিয় এই রাজনৈতিক নেতা ফজলুল হক সাহেবের। একসময়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট আইনজীবী, দেশ মাটি মানুষের ভালবেসে হয়ে পড়েন তুখোর রাজনীতিবিদ! উনার জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষা দীক্ষা আদর্শ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বংশ গৌরব ইত্যাদি আমার এখানে তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। কেননা সেটা প্রত্যেকে জানেন এবং না জানলেও চাইলেই নেট থেকে গুগল থেকে বা তথ্য দেওয়া সহযোগী, আধুনিক মর্ডান পদ্ধতির জনাব উইকিপিডিয়া চ্যাট (রোবট) সাহেব এর মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন। শুধু আমার দৃষ্টিতে নয়, জনাব ফজলুল হক সাহেব যিনি সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতেও তুলনা বিহীন অতুলনীয়। যার তুলনা নেই। তুলনা হয় না। তিনি নিজেই নিজের তুলনা। মহান দেশপ্রেমিক নেতা। উনিই ছিলেন আসল মাটির মানুষ, আসল দেশ প্রেমিক। জীবনে কিছুই নেন নাই। সবই দিয়ে গেছেন, এই দেশের এই সমাজের ও মানুষের। যাকে মন থেকে হৃদয় থেকে দোয়া করলেও শ্রেষ্ঠ। দোয়া না করলেও শ্রেষ্ঠ। স্মরণ করলেও স্মরণ না করলেও একই রকম শ্রেষ্ঠ। যার জন্ম মৃত্যু দিবস পালন করলেও শ্রেষ্ঠ, পালন না করলেও শ্রেষ্ঠ! যার নিয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করলেও বা আয়োজন দিলেও শ্রেষ্ঠ, না দিলেও শ্রেষ্ঠ। নির্ভেজালরা মাফ না চাইলেও আল্লাহর শ্রেষ্ঠ স্থানে থাকেন। হজ না করলেও আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। থাকবেন ভালো, অবশ্যই ভালো থাকবেন, মহান আল্লাহর কাছে। ভেজালদের বারে বারে হজ করা লাগে আর আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া লাগে। জনগণের কাছেও মাফ চাওয়া লাগে বা জনগণ তাদের মাফ দিতে হবে নতুবা মাপ হবে না। লক্ষবার লক্ষজন তার জন্য বেহেশত চাইলেও, বেহেশত হবে কি না সন্দেহ আছে, বলে মন্তব্য অনেকেরই। বিনম্র শ্রদ্ধা মন থেকে দিলেও যা হবে, মন থেকে না দিলেও তাই হবে, তিনি যা ছিলেন, যা আছেন, তাই থাকবেন। জনাব এ কে ফজলুল হক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিক প্রেক্ষাপটে কারো থেকে কিছু পাওয়ার ধার তিনি ধরেন নাই। তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ধারও ধরতে হবে না কাউকে, এমনটাই তার ভক্তদের কথা। এ কে ফজলুল হক তিনি একজন এমন যে, তাকে সম্মান দিলেও ভালো, না দিলেও ভালো। তার পক্ষে মানুষের জন্য, যা দেওয়ার সাধ্য ছিলো, নির্ভেজাল ভাবে তিনি দিয়ে গেছেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের। কোন বিনিময় পাওয়ার স্বার্থে দেন নাই। দেশের ও দশের প্রতি প্রেম ভালোবাসা কর্মতৎপরতা বিনিয়োগ করার জন্য, বিনিময় চান নাই পান নাই। বিনিময় নেবার ভান ভনিতাও করেন নাই। অন্যের অধিকার হনন শোষণ করেন নাই তিনি। নিজেকে নিজে নামিদামি ভেবে আত্ম অহংকার গৌরব করেন নাই। কোন মানুষকেই ছোট করেন নাই কষ্ট দেন নাই। শিশুকালে দাদুর কাছে, পড়া বুঝে দিতে, একবার পাঠ্য পুস্তক বইয়ের পাতাই চোখ বলিয়েই সেই বই ফেলে দিতেন! সব মুখস্ত হয়ে যেত তাই! দাদুকে মুগ্ধ করে দেওয়ার সেই পাহাড়ের মত শক্তিধর যে মানুষটা, ঘুষি মেরে কিলিয়ে শুকনা নারিকেল ভেঙে দাদুকে খাওয়াতেন! এমন মানুষটা, সমস্ত শক্তি মানুষের জন্যই ব্যায় করে গেছেন! গায়ের শক্তি মনের শক্তি, প্রেম ভালবাসার শক্তি, এমনকি মেধা মনন সব কিছু নিংড়ে ঢেলে উজার করে দিয়েছেন নিঃস্বার্থে নিঃশর্তে! এই দেশের মাটি মানুষের জন্য বিলীন করে দিয়েছেন। এই বাংলাদেশেই, তার এই বাংলাদেশেই, সে ধুকে ধুকে মারা গিয়েছিলেন!! ক্ষমতার লড়াই তিনি করেন নাই কোনদিনও। মাটি ও মানুষ প্রেমে, খাটি এই মানুষটা, একবার বই পড়লেই যার বই মুখস্ত হয়ে যেত! তিনি করেছিলেন ভালবাসার লড়াই, ক্ষমতার লড়াই নয়। তার কেমন করে, শেষ জীবনটা কোথায় কেটেছিল, সেই সম্বন্ধে আর বলতে চাই না। তবে তিনি সরকারি অনুদান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা, সরকারি সহযোগিতার ধারে কাছেও যান নাই! ধারও ধারেন নাই সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে আলাদা করার। হাসপাতালের কোনরূপ স্পেশাল সিট, আলাদা বেড, সাধারণ জনগণ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন আলাদাভাবে থাকার বা রাখাল প্রবণতা এবং দেশের অস্তিত্বের সুযোগ-সুবিধার তিনি কামনা করেন নাই। জনসাধারণের মতই নিজেকেও সাধারণ মনে করেছেন! মা জননী মাতৃভূমি মাতৃভাষা জনতার জন্য, দেশের কাজ করার বিনিময় ভাতা নেবো, ভাতা খাবো, প্লট ভূমি বরাদ্দ বানিয়ে রাখার জন্য, বিদেশে ব্যক্তিগত পুজি ইমারতের পাহাড় বানাবার জন্য, ইত্যাদি ব্যক্তিগত কাজ করেন নাই! শত সুযোগ থাকা সত্বেও! দেশ নিয়ে ব্যবসা করেন নাই ইত্যাদি! তখনকার রাজনীতিবিদ তিনি ছাড়াও কিছু ছিলেন, যাদের কাতারে যাওয়া, বিশেষ করে এই মহান ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি অধ্যাপক, আইনবিদ, আইনজ্ঞ, বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর কাতার পর্যন্ত পৌঁছানো বা যাওয়া, আজকের যুগে কারোর সাধ্য নাই জনগণের সেটাই বক্তব্য। যত দল, যত বলই সৃষ্টি হোক, দেশ নতুনভাবে ঢেলে যতই সাজানো হোক। জাতীয় সংসদ নির্বাচন খাঁটি হোক আর ভেজাল হোক, নীতির আদর্শের কাছে তিনিই সেরা। এ কে ফজলুল হকই সেরা!! তাই জন্যই তিনি দেশপ্রেমে টুইটুমবার অমর অক্ষয় শেরে বাংলা। কোনদিনও তার মত আত্ম গৌরব অহংকার মুক্ত, ভেজাল মুক্ত, দেশ প্রেমিক, মাতৃভূমি মাতৃভাষা প্রেমিক, মানব প্রেমিক, দরদি নেতা, এ কে ফজলুল হকের ধারে কাছেও কেউ যেতে পারবে না। এটা আমার কথা নয়, এটা জনসাধারণের কথা। যিনি দেশ থেকে কারো কিছু ভাঙেননি বলবো না। জনগণ বলছে যার আমলে দেশের কারো কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঐতিহ্য নষ্ট হয়নি। সবার ঐতিহ্য রক্ষার সাথে নতুন ঐতিহ্য সংযোজন হয়েছে। বিয়োগ হয়নি যোগ হয়েছে। দেশের ঐতিহ্য আমানত খেয়ানত হয়নি। নিরাপত্তার সাথে রক্ষণাবেক্ষণে, রক্ষক গণের একনিষ্ঠতা ছিলো। দেশের সব পর্যায়ের মানুষের ভালো রাখার শর্তে এবং স্বার্থে। এইতো ছিল তার নেতৃত্বাধীন অস্তিত্ব! এটা নাকি তার দিক থেকে একটা সেক্রিফাইস ছিলো বলা চলে, জনগণ সেটাই বলছেন। তিনি এবং হোসেন শহীদ সরোয়ারদী, একসাথেই একে অপরের বিরোধী থেকে, দুজন চেঞ্জিং করে, দেশের প্রধান হয়েছেন দুজনেই! আবার দুজনেই দুজনের আন্ডারেও থেকে, মন্ত্রিত্বও নিয়েছেন! সাধারণ মন্ত্রী থেকেছেন! সাধারণ মানুষ সাধারণ নেতাও ছিলেন! একদম কোন রূপ চুল ছেরা ছেরি না করে! ডাবরা ডাবরি ধাওয়া পালটা ধাওয়া না করে! এই সেক্রিফাইস জনগণের জন্য! জনগণের ভালো রাখার ভালো থাকার জন্য, তিনারা নিজের সম্মানের দিকে তাকান নাই!! হেরে গেলেও খুশি থেকেছেন! জনগণের চাওয়া ইচ্ছা মনে করে। একেই তো বলে গণতন্ত্র! তিনি ভেবেছেন জনগণ জিতেছে! জনগণের জেতা মানেই তার জেতা! জনগণের শান্তি দিতে, সুখে রাখতে, খুশি থেকে মানুষের কাজ করেছেন! দেশ রাষ্ট্র মানুষের কল্যাণার্থে, উন্নয়ন উন্নতির স্বার্থে, দেশের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের জন্য কাজ করেছেন। দেশের সেবার পিছনে, তাদের কোন আত্ম অহংকার ছিলো না। দেশের মানুষের সেবার ক্ষেত্রে লজ্জার কিছু রাখেন নাই! তাইতো পেরেছিলেন! দুজনেই প্রধান হয়েছেন! দুজনেই দুজনের আন্ডারে আবার ছোট হয়ে থেকেছেন! দেশের মানুষের ভাগ্য অন্বেষণে কাজ করেছেন! প্রধানের আন্ডারে সাধারণ হয়ে থেকে! তখন দেশের অস্তিত্বে যা ছিলো, সে সবকিছুর সঙ্গে নিজেদের যা কিছু অর্জন এড করেছেন! কিছুটি কমান নাই, আরো বাড়িয়েছেন। শুধু দিয়েছেন। শুধু নির্মাণ করেছেন। মানুষের ইচ্ছার সাথে নিজেকে আত্মনিবেদন করে, সাথে থেকেছেন। সর্বস্তরের মানুষের সাথে শুধু প্রেম বিনোদনে মত্ত থেকেছেন। আল্লাহুম্মা আমীন। আলহামদুলিল্লাহ। এইরকম নেতা আবার যদি দেশ ফিরে পেতো, কেউ আসতো, তবে সেটাই হত দেশের জন্য সবচেয়ে বড় কিছু পাওয়া। নিজের নাম কাম, ডাক হাক জাহেরী বা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়। জনগণের জন্য যা কিছু করেছেন। অর্থনীতিতে সমাজনীতিতে রাজনীতিতে, আইননীতিতে কোন নীতিতেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য নয়। শুধু মানুষের কাজ করার জন্যই কাজ করেছিলেন। পরাধীনতার দাবানল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে, পরাধীনতার হাত থেকে বাঁচাতে, নিজ দেশের মানুষের মুক্তির জন্যই, জীবন পণ লড়ে গেছেন! কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা ধান্দা বিনিময় ছাড়াই। এই দেশে তার মতন, তার সহকর্মীসহ তাদের মতন, ত্যাগী নেতা কোনদিন আর আসবে কিনা মহান আল্লাহই জানেন। অবশ্যই আমি আজকের কোন দল, কোন পক্ষর কষ্ট দোয়ার জন্য, ছোট করার জন্য, এই কথাগুলো বললাম না। এই কথাগুলো কারোকে উদ্দেশ্য করে বলছি না, লিখছি না। আমি কোন একক দলের হয়েও বললাম না, লিখলাম না। আবার সকল দলের হয়েও বললাম, লিখলাম। সকল মানুষ, সবার জন্যই- সবার হয়ে আমার এই বলা। আমি বিগত দিনের ওই দেশ দরদীদের বাংলাদেশে, সবার কল্যাণ চাই জাতি ধর্ম দলবল নির্বিশেষে। আপনারা প্রত্যেকে ভাল থাকুন আমার পক্ষ থেকে দোয়া রইলো। আমার জন্যও সবার কাছে দোয়া চাই। দয়াময় আল্লাহ যেন আমার সাহিত্য সংস্কৃতির সকল কাজে রহমত বরকত দান করেন। সহায় হন, পাশে থাকেন। আমিন।

০৫.১১.২০২৫ ইং, দুপুর ১টা, বুধবার।

Related Articles

Back to top button