আইন-আদালতবাংলাদেশ

মিরপুরের মাদক সিন্ডিকেট ভয়ঙ্কর

মাদকের নিউজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাংবাদিক মনির

মাহমুদ হোসেন মনির, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : রাজধানীর মিরপুর মাদকের অন্যতম আখড়া। বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ মাদকের বিস্তার এই এলাকায়। আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর রূপে ছড়িয়ে পড়েছে এই সিন্ডিকেট। পুরো মিরপুরজুড়ে শতাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই চলে মাদক ও জুয়া। গত ১০ বছরে মাদকের জের ধরে বহু খুনের ঘটনা ঘটেছে।এরপরও অবাধে মাদক কেনাবেচা চলছে মিরপুরে। পুলিশের অভিযানে কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও জেলহাজতে বসে, এমনকি অনেকে দূরে আত্মগোপনে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের মাদক সাম্রাজ্য।
জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেই মাদকের ভয়ঙ্কর ব্যবসা চলছে রাজধানীর মিরপুর ১১ নং বিহারী মিল্লাত কাম্পে। আর এ পেশা নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী রাজিয়া, আনোয়ারী, শাহনাজ, সোনিয়া, সায়মা, শাম্মী, জামিলাসহ মাদক সম্রাজ্ঞীরা । মিল্লাত ক্যাম্পে টাইমস ২৪ ডটনেটের ক্রাইম রিপোর্টার মনির পেশাগত কাজে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে ধরে মারধর করে। সাংবাদিক পরিচয় শুনার পরেও মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা করে। স্থানীয় ও তার পরিবারের সহযোগিতার সাংবাদিক মনির প্রাণে রক্ষা পান।বর্তমানে টাইমস ২৪ ডটনেটের ক্রাইম রিপোর্টার মনির ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, মিরপুর ১১ নং বিহারী মিল্লাত কাম্পে সহ আশপাশের এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। বাড়বে খুন-খারাবিসহ নানা ধরণের অপরাধ। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে।


এ সম্পর্কে স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মিল্লাত ক্যাম্পের মাদকের ডন আনোয়ারি। মাদক ও হিরোইন ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায় এই আনোয়ারি। একটা সিন্ডিকেটকে প্রতিমাসে মাসোয়ারা দিয়ে এই আনোয়ারি এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন,এদের নামে পল্লবী থানায় একাদিক মামলা আছে এখনো তারা নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করে যাছে। এ ছাড়া এই মাদক থেকে মুক্তির জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানান।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ বছরে এখানে ১৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাব্বির নামের এক কিশোরকে হত্যা করা হয় এই মার্কেটে। এ ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী লেংড়া রুবেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহত সাব্বিরের পরিবার। গত বছর চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এ পরিত্যক্ত মার্কেটে। বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মাদক কিংবা জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে। কোনো কোনো ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর গলিত বা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করছে পুলিশ।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মিরপুর মডেল থানা এলাকায় আটটি, পল্লবী থানা এলাকায় ২৪টি, কাফরুল থানা এলাকায় ১০টি, শাহ আলী থানায় চারটি এবং রূপনগর, ভাসানটেক ও দারুসসালাম থানা এলাকায় রয়েছে ১০টি মাদকের স্পট। তবে এসব এলাকায় আরও অনেক ভাসমান মাদকের স্পট রয়েছে।
মিরপুরের যেসব এলাকাকে মাদক ব্যবসার স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- দারুসসালাম ও শাহ আলী থানা এলাকা, শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্সের পাশে ইদ্রিসের ফেনসিডিলের স্পট, লালকুঠি এলাকায় পুলিশের কথিত সোর্স রাজা ও ল্যাংড়া কবিরের ফেনসিডিলের স্পট, গাবতলী বাঁধের ওপর আমেনা বেগমের ফেনসিডিলের স্পট, শাহ আলী স্কুল রোডে বাবুর গাঁজার স্পট, কবরস্থান বস্তিতে রয়েছে ঝুনুর ফেনসিডিলের স্পট। এ ছাড়া পল্লবী থানা এলাকার সাংবাদিক কলোনির পূর্ব পাশের গলিতে কালুর ফেনসিডিলের স্পট, রাইনখোলায় ফাতেমা ওরফে ফতে, মিয়াবাড়ি হাজী রোড বস্তিতে মেহেরুন, মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে ববি, ঝিলপাড় বস্তিতে নজরুল ওরফে নজু, মিল্লাত ক্যাম্পে রুস্তম, মিরপুর মাজার রোডে রাজা, কসাইটুলী বাগডাসার নাসির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, কাফরুলের কাজীপাড়ায় হারুন মোল্লা, বাদশা মিয়া, বাবুল মিয়া, আল-আমিন, মাহমুদুর রহমান রিপন ওরফে ফেনসি রিপন, সেলিম, ভাসানটেকের কানা জাহাঙ্গীর, আবুল কালাম ওরফে কালু মিয়া, দুলাল মিয়া, বাশার, মিন্টু, ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্পে গুড্ডু, ৫ নম্বর এভিনিউ পানির ট্যাঙ্ক এলাকায় ছানা, বাদল, আরিফ, স্বর্ণপট্টিতে সাজু, ১২ নম্বর সেকশনে জামাল, মুসলিম বাজার ঢালে নুরু, শহীদ চলন্তিকা ক্লাব এলাকায় তপন, গিয়াসউদ্দিন, সুন্দর বাপ্পী, জিতু, মামুন, ৬ নম্বর সেকশন ট-ব্লকে রফিক, রূপনগর শিয়ালবাড়ীতে পারভেজ, পারভিন, ৬ নম্বর রোডে হারুন, ৭ নম্বর রোডে নানা, ৪-৫-৬ নম্বর রোডে রাজু ও তার মা নাজমা ওরফে নাজু, ৭ ও ৮ নম্বর লিঙ্ক রোডের বস্তিতে আবু সাঈদ, ১০ নম্বর রোডে সুমন, ১১ নম্বর মেইন রোডে আওলাদ, শহর আলী, রূপনগর রোডের পশ্চিম পাশে উজ্জ্বল, ১২ নম্বর রোডে আরাফাত, সুমন, হূদয়, সোহেল, ১২ নম্বর রোডের পশ্চিম পাশে শিল্পীর মা শুক্কুরী বেগম, ১৩ নম্বর রোডে শীলা আপা, ১৪ নম্বর রোডে লতিফ, জাকির, কসাই মিন্টু ও সুমনের মাদকের স্পট রয়েছে। এ ছাড়া রূপনগর আবাসিক মোড় জামতলায় সেলিমের গাঁজার স্পট, ৩৩ নম্বর রোডের রূপনগরের পশ্চিম পাশের বস্তিতে মজিবরের গাঁজার স্পট, রূপনগর ১ নম্বর রোডের পশ্চিম পাশের বস্তিতে মামুন ও মাসুদের গাঁজার স্পট, পূরবী সিনেমা হলের বিপরীতে পূর্ব পাশে রয়েছে জহিরের ফেনসিডিলের স্পট।
এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন শুধু মাদকের কারণে এই এলাকায় টিকা দায় হয়ে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এখন বেপরোয়া। অনেকে আবার জেলখানা থেকেও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। এ সকল মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বললেই লাশ হতে হবে। এ কারণে এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলতে চায় না।
পুলিশ বলেছেন, মিরপুরে এখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। আমরা মাদক নির্মূলের চেষ্টা করব। এটা পুলিশের অঙ্গীকার। তবে এর জন্য সাধারণ লোকজনকেও এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে মাদক নির্মুল হয়ে যাবে।

Related Articles

Back to top button