শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন: সিভিল অ্যাভিয়েশনের বড় ত্রুটি

রানা মিয়া: ১৮ অক্টোবর শনিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে গার্মেন্টস, ওষুধ, কেমিক্যাল ও ইলেকট্রনিকসসহ কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। এক্সপার্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) অনুযায়ী প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা)। অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটারদের অনুপস্থিতি এবং দ্রুত সমর্থন না আসায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হয়, যা দেশের রপ্তানি চেইন ও বাণিজ্যিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় কার্গো ভিলেজের কর্মীরা বারবার ফায়ার স্টেশনে সাহায্যের জন্য কল করলেও সঠিক সময়ে ফায়ার টিম পৌঁছায়নি। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার স্টেশন মাত্র ৩০০ মিটার দূরে থাকলেও সাপোর্ট সময়মতো না পৌঁছায়, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি ঘটিয়েছে।
এক রপ্তানিকারক বলেন, “যদি অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটাররা থাকতেন, ক্ষতির পরিমাণ এত বড় হতো না। বর্তমান কর্মীদের প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়।” তদন্তে দেখা গেছে, বহু অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটার তদবির করে সিকিউরিটি বিভাগে বদলি হয়েছেন। ফলে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের দক্ষতা যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
রপ্তানিকারক ও বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ কর্মীর অভাবে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসেনি, যা দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি চেইনের জন্য হুমকি। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থানে এমন একটি ঘটনা জনগণের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেক ব্যবসায়ী ও বেসরকারি সংগঠন সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে।
সরকার দ্রুত একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে। তবু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ফায়ার টিমের দেরির পেছনে কোনো স্বতন্ত্র হস্তক্ষেপ বা অনভিপ্রেত সম্পৃক্ততা ছিল কি না? ব্যবসায়ী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও সময়সীমাসহ তদন্তের দাবি তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্তটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, বহুমুখী ও প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহায়তায় পরিচালিত হওয়া উচিত। “এ ঘটনা শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় দুর্বলতাকেও প্রকাশ করেছে। প্রশাসন যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেবে, ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।”
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের কাছে ব্যবসায়ীদের প্রধান দাবি:
অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটারদের মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে নেওয়া;
ফায়ার সাপোর্ট ব্যবস্থার মান ও প্রশিক্ষণ উন্নত করা;
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার কার্যকর প্রস্তুতি ও তৎপরতা নিশ্চিত করা;
ফায়ার স্টেশন থেকে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছানোর কার্যকর যোগাযোগ ও অ্যালার্ম ব্যবস্থা তৈরি করা;
তদন্তকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়নির্দিষ্ট করা, প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া।
শাহজালাল বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ড প্রমাণ করে যে, অভিজ্ঞ কর্মী ও কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া বিমানবন্দর নিরাপত্তা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক দাবি নয়, দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তারও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফায়ার টিমের দেরি, অভিজ্ঞতার অভাব এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত, জবাবদিহিমূলক ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করলে ক্ষতিপূরণ মাপা ছাড়াও ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি আটকানো সম্ভব হবে না।
				


