রাজনীতি

ঢাকা-১৮: বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে টানটান উত্তেজনা, শীর্ষে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী

রানা মিয়া, উত্তরা প্রতিনিধি : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড় এখন তুঙ্গে। দলের ভেতরে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা— কে পাবেন কাঙ্ক্ষিত ‘ধানের শীষ’ প্রতীক, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

দলীয় সূত্র জানায়, অন্তত নয়জন প্রভাবশালী নেতা এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন। কেউ তৃণমূলে উঠান বৈঠক করছেন, কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন, আবার কেউ সরাসরি গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তৎকালীন ভোটে তিনি জনসমর্থন পেলেও “রাতের ভোট” ও “নির্বাচনী কারচুপি”-র কারণে পরাজিত দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন মাঠে থাকা এই নেতা এখনো তৃণমূলে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। তার অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, এবার মনোনয়ন পেলে তিনি নিশ্চিত বিজয় অর্জন করবেন।

এম কফিল উদ্দিন আহমেদ

বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ব্যবসায়ী এম কফিল উদ্দিন আহমেদও আছেন শক্ত অবস্থানে। ২০১৮ সালেও তিনি দলীয় চিঠি পান। এবারও মাঠে নেমেছেন দলের ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ কর্মসূচি প্রচারে। নিয়মিত উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তৃণমূলে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। দলের জন্য তার দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও আর্থিক অবদান তাকে মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত অবস্থানে রেখেছে।

মোস্তফা জামান

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ হলেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। তুরাগ ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করে তিনি নিজস্ব রাজনৈতিক বলয় গড়ে তুলেছেন। যদিও কিছু সিনিয়র নেতার সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে, তবুও তরুণদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

কামরুল ইসলাম

সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম দীর্ঘদিন পর আবারও আলোচনায় এসেছেন। একসময় ঢাকার রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই নেতা ১/১১ সময়কালীন সংস্কারপন্থী হিসেবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন। সম্প্রতি তার ঘনিষ্ঠ মহল পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন আছে, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনিও মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় রয়েছেন।

আফাজ উদ্দিন আফাজ

দীর্ঘ দুই দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আফাজ উদ্দিন আফাজ ছাত্রদল-যুবদল হয়ে বিএনপির মূলধারায় উঠে এসেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “ঢাকা-১৮ কে মডেল আসন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।” অতীতে কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ‘ভোট কারচুপির শিকার’ হওয়ার দাবি করলেও তৃণমূলে এখনো জনপ্রিয় ‘জনতার কাউন্সিলর’ হিসেবে পরিচিত তিনি।

বাহাউদ্দিন সাদী

আগের দুই নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করা বাহাউদ্দিন সাদী এবার তুলনামূলকভাবে নীরব রয়েছেন। ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি আড়ালে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে, তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনও মনোনয়ন প্রত্যাশী। পূর্বে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘রাতের ভোটে’ পরাজিত হন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর তৃণমূল কর্মীরা তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি এখন অন্যতম জনপ্রিয় মুখ।

আকতার হোসেন

বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন ক্ষিলখেত ও ডুমনি এলাকায় পরিচিত মুখ হলেও পুরো আসনজুড়ে তার প্রভাব রয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় এবং তরুণ ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে মনোযোগী।

হেলাল তালুকদার

দক্ষিণখান থানা বিএনপির আহ্বায়ক হেলাল তালুকদারও মনোনয়ন দৌড়ে অন্যতম আলোচিত নাম। ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি’ নিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক করছেন তিনি। নতুন কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেলাল বলেন,

“দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে দক্ষিণখান থানার অলিতে-গলিতে উঠান বৈঠক করছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তার পক্ষেই কাজ করব। তবে তৃণমূলের ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি আশাবাদী।”

তার অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, জনগণের ব্যাপক সাড়া তাকে এ আসনের অন্যতম শীর্ষ প্রার্থী করে তুলেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই নয়জনের বাইরে আরও কয়েকজন জোটভুক্ত নেতার নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে।

Related Articles

Back to top button