আরব আমিরাতের হাতে সুদানের মানুষের রক্ত

টাইমস ২৪ ডটনেট : আফ্রিকার দেশ সুদানে প্যারামিলিটারি আরএসএফের হাতে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়েছেন দারফুর অঞ্চলের বাসিন্দারা। এরমধ্যে সব নৃশংসতা ছাড়িয়ে গেছে এল-ফাশার শহরে। গত রোববার শহরটি দখল করার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করে আরএসএফ। ভয়াবহ এই গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।গত অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, আরএসএফকে সাজোঁয়া যানসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিচ্ছে আরব আমিরাত।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এ নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা ব্যুরো উভয় জানায়, আমিরাত থেকে সুদানের আরএসএফের কাছে সম্প্রতি অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে আমিরাত। এসব অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক চীনা ড্রোন, ছোট অস্ত্র, ভারী মেশিনগান, সামরিক যান, কামান, গোলা এবং গোলাবারুদ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আরএসএফকে যে আমিরাত অস্ত্র পাঠায় এটি একদম প্রকাশ্য বিষয়। তারা বলেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সুদানের দ্বন্দ্বে আমিরাতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তাদের একটি এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে আমিরাতকে নিয়ে যা যা বলা হয়েছিল, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে সেগুলোই আবার তুলে ধরা হয়েছে।

মিডল ইস্ট আই জানিয়েছিল, খুবই জটিল একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমিরাত সুদানের আরএসএফের কাছে অস্ত্র পাঠায়। আমিরাত থেকে অস্ত্রগুলো লিবিয়া, চাদ, উগান্ডা এবং সোমালিয়া হয়ে সুদানে যায়।গত মে মাসে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তদন্তে খুঁজে পায় আমিরাত চীনের তৈরি অস্ত্র সুদানের দারফুরে পাঠাচ্ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে জিবি৫০এ-গাইডেড বোমা এবং ১৫৫ মিলিমিটারের এএইচ-৪ কামানও রয়েছে।আরএসএফের ফাইটাররা এল-ফাশার শহরে গিয়েই গণহত্যা শুরু করে। যেগুলো ভিডিও করে আবার তারা নিজেরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, গত মার্চে রাজধানী খারতুমের প্রায় পুরোটা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ নিতে সমর্থ হয় সুদানের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই আরএসএফের কাছে বেশি পরিমাণে অস্ত্র পাঠানো শুরু করে আমিরাত।

সুদানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে থাকে ইরান, তুরস্ক এবং মিসর।মে মাসে পোর্ট সুদানের একটি সরকারি ভবনে নির্ভূল ড্রোন হামলা চালায় আরএসএফ। ওই সময় তুরস্কের কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হন। যারা সুদানের সেনাবাহিনীকে টেকনিক্যাল সহায়তা দিতে সেখানে অবস্থান করছিল। আর ওই হামলার নির্দেশ দিয়েছিল আমিরাত।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, আমিরাত এখন আরএসএফকে চীনের রেইনবো সিরিজের ড্রোন দিচ্ছে। এই সিরিজের সিএইচ-৯৫ মডেলের একটি ড্রোন রয়েছে। যেগুলো নির্ভূল অস্ত্র থেকে গুলি বা বোমা ছুড়তে পারে। এছাড়া এগুলো একটানা ২৪ ঘণ্টা উড়তে পারে। এতে করে দীর্ঘ সময় নজরদারি ও বিমান হামলা চালানো সম্ভব হয়।

আরএসএফ প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো আমিরাতের দুবাইয়ে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তিনি ও তার পরিবার এই সাম্রাজ্য ব্যবহার করে আমিরাতে বিপুল সোনা চোরাচালান করেন। এই সোনাগুলো দারফুরের খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। আর এগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরএসএফের সেনারা।

সূত্র: মিডল ইস্ট আই।




