বাংলাদেশ

সুপ্রিম কোর্টের বৈষম্যমূলক রায় বাতিলের দাবি — অনিশ্চয়তায় তিন শতাধিক প্রকল্পের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বছরের পর বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। রাজস্ব বাজেটে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের দাবিতে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর ফোরাম’।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নং–৪৬০/২০১৭ এবং রিভিউ পিটিশন নং–১৮১/২০১৮-এ প্রদত্ত রায় প্রকল্প জনবলদের জন্য “বৈষম্যমূলক” এবং “অবিচারমূলক”। তারা অবিলম্বে এই রায় বাতিল করে ২০০৫ সালের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এস.আর.ও নং ১৮২-এর আলোকে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান।

দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অনিশ্চয়তা
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি শাহ আলম বলেন, “আমরা সরকারি নিয়মে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। কেউ পাঁচ বছর, কেউবা বিশ বছর ধরে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকল্প শেষ হলেই চাকরির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়।”

তিনি জানান, বর্তমানে তিন শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন, যাদের কর্মজীবন প্রকল্পভিত্তিক হওয়ায় স্থায়ী কাঠামোতে স্থান পাচ্ছে না। অনেকেই সরকারি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় অন্য কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন।

১৯৯৭ সালের পর থেকে বৈষম্য শুরু
ফোরামের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ১৯৭২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলদের রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর ও নিয়মিতকরণ করা হয়েছিল ২০০৫ সালের ২০ জুন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এস.আর.ও নং ১৮২-আইন/২০০৫ অনুসারে।
কিন্তু ১৯৯৭ সালের পরবর্তী প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলদের সেই সুবিধা দেওয়া হয়নি।

সংগঠনের অভিযোগ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সময় প্রদত্ত ২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় (৪৬০/২০১৭) এই বৈষম্য আরও গভীর করেছে। রায়টি প্রদানের আগে বিভিন্ন অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প জনবল আদালতের আদেশে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত হলেও পরবর্তীতে একই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ডিপিপিতে স্থানান্তরের উল্লেখ, বাস্তবে কার্যকর নয়
প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রতিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি)-এ জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে প্রকল্প শেষ হলে কর্মরত জনবল কার্যত বেকার হয়ে পড়েন।

ফোরামের নেতারা বলেন, “এটি প্রশাসনিক অদক্ষতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের বহিঃপ্রকাশ। আমরা বছরের পর বছর কাজ করছি অথচ আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত—এটা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়।”

ফোরামের তিন দফা দাবি
১. নতুন প্রজ্ঞাপন: ২০০৫ সালের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এস.আর.ও নং ১৮২-এর আলোকে ১৯৯৭ সালের পরবর্তী প্রকল্প জনবলদের রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর ও নিয়মিতকরণের জন্য অনুরূপ প্রজ্ঞাপন জারি করা।
২. রায় বাতিল: সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নং–৪৬০/২০১৭ ও রিভিউ পিটিশন নং–১৮১/২০১৮-এর বৈষম্যমূলক রায় বাতিল করা।
৩. মানবিক বিবেচনা: দীর্ঘদিন কর্মরত প্রকল্প জনবলদের বৈষম্য ও অনিশ্চয়তা দূর করে তাদের চাকরি স্থায়ী করে মানবিক জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান।

প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন, “এটি শুধু একটি চাকরির দাবি নয়, এটি সমঅধিকার ও প্রশাসনিক ন্যায়ের দাবি।”

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রকল্প জনবল প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাদের স্লোগান ছিল—
“বৈষম্য নিপাত যাক, প্রকল্পের জনবল মুক্তি পাক।”

Related Articles

Back to top button