বাংলাদেশ

ঐতিহ্য ও পর্যটনের মিলন ঘটাবে প্যাডেল স্টিমার ‘পি এস মাসুদ’

মাখদুম সামি কল্লোল: বাংলাদেশের নদীপথে আবারও ভেসে উঠছে শতবর্ষী ঐতিহ্যের জলযান—প্যাডেল স্টিমার ‘পি এস মাসুদ’। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের পর ঐতিহাসিক এই স্টিমারটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে পুনরায় সার্ভিসে যুক্ত হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী ২৪ অক্টোবর ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রিপ পরিচালনা করা হবে। নৌ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে এ ট্রায়াল শেষে এটি নিয়মিত যাত্রী ও পর্যটন সার্ভিসে যুক্ত হবে।

“ঐতিহ্য ফিরছে নদীপথে”

চেয়ারম্যান বলেন, “পি এস মাসুদ কেবল একটি পরিবহনযান নয়—এটি বাংলাদেশের নদীসংস্কৃতির জীবন্ত ঐতিহ্য। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখুক ও অনুভব করুক। পাশাপাশি এটি নদীপথভিত্তিক পর্যটন খাতে নতুন গতি আনবে।”

তিনি জানান, স্টিমারটির যান্ত্রিক অংশ, কাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পুরনো সৌন্দর্য বজায় রেখে এতে যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

ঢাকা–বরিশাল রুটে নিয়মিত পর্যটন সার্ভিস

বিআইডব্লিউটিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘পি এস মাসুদ’ প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে নিয়মিত চলবে। এটি হবে একটি বিশেষ পর্যটন সার্ভিস, যেখানে যাত্রীরা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভোরের কুয়াশা, রাতের তারাভরা আকাশ এবং নদীজীবনের অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আরও স্টিমার সংরক্ষণের উদ্যোগ

চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমরা আরও কয়েকটি পুরনো স্টিমার সংরক্ষণ ও সংস্কারের পরিকল্পনা করছি। লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশের নদীপথের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা এবং পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করা।”

নদীর সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধন

চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ বলেন, “আমরা চাই মানুষ আবার নদীর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করুক। একসময় নদী ছিল বাঙালির জীবনরেখা—‘পি এস মাসুদ’ সেই সম্পর্কেরই প্রতীক হয়ে ফিরছে।”

বিআইডব্লিউটিসির তথ্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই স্টিমারটি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বহু বছর পর আবারও ‘পি এস মাসুদ’ রূপসী বাংলার নদীপথে ভেসে উঠবে—যা অতীতের গৌরব, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠবে।

ঐতিহ্যবাহী ‘পি এস মাসুদ’-এর পুনর্জীবন শুধু একটি পুরনো জলযানের পুনরাগমন নয়—এটি বাংলাদেশের নদীপথের ঐতিহ্য, পর্যটন ও সংস্কৃতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

Related Articles

Back to top button