পুরান ঢাকায় শাশুড়িকে কুপিয়ে জখম

ফাতেমা নাসরিন: পুরান ঢাকার ইসলামবাগে শাশুড়ি মোছাঃ রুমা বেগম কুপিয়ে জখম করেছে মেয়ের জামাই রাকিব আকন। আহত রুমা বেগম ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রয়েছেন।
এ ঘটনায় শাহ জালাল মোল্লা বাদী হয়ে ৫ পাঁচজনকে আসামি করে ও অজ্ঞতা নামা আরো দুই তিনজনকে আসামি করে চকবাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন । মামলা নং ১৪, তারিখ- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আসামীরা হলেন, ১। মোঃ রাকিব আকন (২৮), পিতা- আজাদ আকন, বর্তমান ঠিকানা- জিনজিরা বাদাম গাছতলা, থানা- কেরানীগঞ্জ জেলা ঢাকা। ২। মোঃ গোলাম হোসেন (৪০), পিতা- আব্দুল হান্নান, বর্তমান ঠিকানা- এরশাদ কলোনি, দুই নম্বর ভবন, চকবাজার ঢাকা। ৩। তুষার আপন (৩০), পিতা- আজাদ আকন, বর্তমান ঠিকানা- জিনজিরা বাদাম গাছতলা, থানা- কেরানীগঞ্জ, জেলা- ঢাকা।
৪। মোঃ নাইম আকন (৩০), বর্তমান ঠিকানা- পূর্ব ইসলামবাগ মাওরা টেক, শিশি বোতল গলি, থানা- চকবাজার, জেলা- ঢাকা।
৫। আজাদ আকন (৫৫), পিতা- মোঃ শামসুদ্দিন আকন, বর্তমান ঠিকানা- ইসলামবাগ, মাওরা টেক শিশুর বোতল গলি, থানা- চকবাজার, জেলা- ঢাকা।
এখন পর্যন্ত ১ নং আসামী রাকিব আকন ও ৫ নং আসামী আজাদ আকনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী শাহজালাল মোল্লা নিজ জেলা শরীয়তপুরে মুদি দোকানের ব্যবসা করেন এবং তার স্ত্রী রুমা বেগম (৪২) চকবাজার থানাধীন এলাকার পশ্চিম ইসলামবাগ আইয়ুব আলীর ভাড়া থেকে বিভিন্ন ম্যাচের রান্না করে খাবার বিক্রি করেন। শাহজালাল মোল্লা মাঝেমধ্যে ঢাকা গিয়ে স্ত্রীকে সাহায্য করেন। তার সন্তান রবিন মোল্লা ১১ বছর যাবত বিদেশে থাকেন। এক নম্বর আসামি মহম্মদ রাকিব মোল্লার সঙ্গে ১০ বছর পূর্বে তাদের কন্যা মোসাম্মৎ সেতু আক্তারের বিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘরে একটি কন্যা সন্তান ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। শাহজালাল মোল্লার ছেলে রবিন মোল্লা দেশের বাহিরে থাকার সুবাদে তার স্ত্রী মোছাঃ ঝর্ণা খাতুনের সঙ্গে ১নং আসামী রাকিব আকনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি রাকিবের স্ত্রীর সেতু জানতে পায় এবং তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বিবাদ হয়। এক পর্যায়ে এ নিয়ে সালিশ মিমাংসা হয় তাদের মধ্যে।
বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং তারিখে দুপুর দেড়টার দিকে বাসায় এসে এক নম্বর আসামি রাকিব সহ অন্যান্য আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে বাসায় ঢুকে রাকিবের হাতের চাপাতি দিয়ে রুমা বেগম কে হ্যালো পাতারই কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে চলে যায়।
আসামিরা চলে যাওয়ার পরে শাহজালাল মোল্লার মেয়ে সেতু আক্তার বাথরুমের সামনে তার মাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে। পেটে আঘাতের কারনে নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে ও পুরো বাথরুম রক্তে ভেসে গেছে। তখন খালা শারফিন পেটে কাপড় পেচাইয়া ভ্যানে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শাহজালাল মোল্লা বলেন,
আমি গ্রামে দোকানদারি করছিলাম, আমাকে হঠাৎ ফোন দিয়ে বলতেছে সেতুর মাকে তোমার জামাই রাকিব মাইরা ফালাইছে। আমি সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে চলে আসি এবং তাকে আইসিইউতে দেখতে পাই। আমার জামাই রাকিব দীর্ঘদিন আমার মেয়েটাকে জ্বালায় আসতেছে। আমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ নিয়ে অনেক বিচার হয়েছে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার সংসার করাইছি এতদিন । রাকিব দীর্ঘদিন এর টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। রাকিব ইউরোপ যাবে ৩০ লাখ টাকা লাগবে বলে। আমি সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষ এত টাকা আমার কাছে নাই। তারপরও বলেছি তোমার বাড়ি থেকে কিছু টাকা আনো আর আমি কিছু টাকা দেই মিলিয়ে তোমাকে ইউরোপ পাঠানোর ব্যবস্থা করি। সে একটাকাও আনতে পারবে না। সব টাকা আমারই দিতে হবে বলে চাপ দিতে থাকে।
আমি সাফ না করে দেই। আমার স্ত্রীও টাকা দেবে না বলে রাকিব কে জানিয়ে দেয়। যার কোন রাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্ত্রীর উপর নির্যাতন করল এবং তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করল। আমি ওর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে আসামী রাকিবের স্ত্রী সেতু আক্তার বলেন, আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে রয়েছে। রাকিবের নির্যাতন সহ্য করেই ওর সাথে ঘর সংসার করছি ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকিয়ে। আমাকেও প্রায় বিদেশে যাবে বলে টাকার জন্য চাপ দিত এবং আমাকে মারধর করত। রাকিব আমার ভাইয়ের বউয়ের সাথে পরকীয়া করতো। এলাকার মানুষ সালিশ মীমাংসা করে আমাকে আবার ঘর করার জন্য অনুরোধ করলে, সন্তানদের দিকে তাকিয়ে ওর সাথে সংসার করি। ঐদিন আমার মাকে যেভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যখন করেছে। কুপে আমার মায় নাড়ি বুড়ি বের করে দিয়েছে। আমার মাকে আরেকটু হলে মেরেই ফেলতো। ওরা আমার মাকে মেরে ধরে পালিয়ে যায়। আমি ওর সাথে আর ঘর-সংসার করতে চাই না। আমি রাকিবের ফাঁসি চাই, বিচার চাই।
এ ব্যাপারে রেশমা আক্তার বলেন, আমাকে আমার খালাতো বোন সেতু আক্তার ফোন দিয়ে বলে যে, বইনা তোমার খালারেতো রাকিবে কোপাইয়া মাইরা ফালাইছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখি ঘর রক্তে ভরে আছে। আমি এরপর ঢাকা মেডিকেলে খালাকে আইসিইউতে দেখতে পাই।
শাহজালাল মোল্লার শ্বশুর ও আহত রুমা বেগমের পিতা মোঃ হোসেন সরদার বলেন, আমার নাতি ও নাতিন জামাই রাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন ঝগড়ার খবর মাঝে মধ্যে শুনতাম। গ্রামে বসে শালিসির মাধ্যমে আমার নাতিনকে সবাই বুঝিয়ে রাকিবের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছি। রাকিব বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা চাইতো তাও অনেকবার আমার মেয়ের নিকট থেকে শুনেছি। ছোটখাটো রাস্ট্রে গেলে সবাই না হয় জোগাড় করে দিতে পারতাম। কিন্তু ইউরোপ যেতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লাগে। এতো টাকা দেওয়া সম্ভব?
আমার মেয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। যেভাবে কুপিয়ে জখম করেছে তাতে মনে হয় না ও বাঁচবে। যদি আল্লায় রেখে যায়। একজন জামাই তার শ্বাশুড়িকে এভাবে কুপিয়ে জখম করতে পারে? আমি এর সর্বোচ্চ বিচার দাবী করছি।