বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের দোসর বিমান কর্মচারী সুমন বিমানবন্দরে আতংক

এনামুল হক, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর এয়ারপোর্ট বিভাগের কর্মচারী ট্রাফিক হেলপার ফয়েজ চৌধুরী সুমন। নি:স্ব অবস্থায় ঢাকায় আসা এক মানুষ। বিমান বাংলাদেশে চাকুরির সুবাদে পেয়েছে আলাদীনের চেরাগ। যেই চেরাগের ঘষায় নিজে হয়ে গেছে শতকোটি টাকার মালিক। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ সার্ভিস বিভাগ। সেই বিভাগের ট্রাফিক সেকশনে চাকুরীর সুবাদে ফয়েজ চৌধুরী সুমনের সাথে পরিচয় হয় সাবেক স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রী এমপিদের সাথে । যার প্রভাবে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এয়ারপোর্ট দাপিয়ে বেড়ানো কারো অজানা নয়। তার নেতৃত্বে লাগেজ কাটা যাত্রীদের মালামাল তছরুপ, স্বর্ণ চোরাচালান,বৈদেশিক মূদ্রা পাচার, সাথে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে যোগ সাজসে বৈদেশিক মূদ্রা পাচার এবং অবৈধ ভাবে মানব পাচারের অভিযোগ রয়েছে। যা দিয়ে মোটা অংকের অর্থ নামে বেনামে ব্যাংক এফডিআর করে রেখেছে বলে জানা যায়। গাজীপুর, দক্ষিনখানের বিভিন্ন জায়গায় এবং পূর্বাচলে তার প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ-সম্পত্তি রয়েছে। যা সে চাকুরীকালীন অর্জন করেছে বলে তার স্ত্রীর ভাই সোহাগ অনেকের সাথেই কথায় কথায় জানিয়েছে।

সুমনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ গত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের বিশেষ লাগেজ বিমানবন্দর পার করার কারিগর হিসেবে তার নাম চাউর ছিল। সাবেক ঢাকা ১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান দুবাই থেকে প্রতিনিয়ত স্বর্ণপাচারের সিন্ডিকেট নিয়ে যাওয়া আসা করত বলে,একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। হাবিব হাসান এবং তার চোরাচালানি টিমের মালামাল নির্বিঘ্নে এয়ারপোর্ট পার করার দ্বায়িত্বেও থাকত এই সুমন।
সুমনের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের এই দহরম মহরম এমনি হয়নি। সুমন এয়ারপোর্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আরও অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমন ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সিটি করপোরেশন কমিশনার নাঈমের অর্থ যোগান দাতা হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে নাঈমের মাধ্যমে ৫ ই আগষ্টে অর্থ বিনিয়োগ করে ছাত্র জনতার অভূত্থানে বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে। সুমন বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এর মিছিল মিটিং এ গোপনে অর্থ যোগান দিয়ে থাকে বলে আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে বুধবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মোঃ নজরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে বলে জানান। তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের তথ্য দিয়ে সহোযোগিতারও আহব্বান জানান।
সর্বপরি ফয়েজ চৌধুরী সুমন এলাকার ত্রাস। তার বিরুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া একজন প্রথিতযশা গণমাধ্যম কর্মীকে তার নেতৃত্বে দলবল নিয়ে হত্যা চেষ্টায় আহত করার অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলাও হয়েছে। অন্যদিকে জানা যায় উক্ত সংবাদকর্মীকে মামলা তুলে নিতে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টায় হুমকি ধমকী দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুমন মূলত ঠান্ডা মাথার অপরাধী। তাকে দেখে কারো বিশ্বাস হবার কথা নয় তার অপরাধের মাত্রা কত হিংস্র । তার সকল অপকর্মের সাথে তার স্ত্রীর ভাই সোহাগ জড়িত। সুমনের শতকোটি সম্পদের পাহারাদার মূলত তার শশুড় বাড়ির আত্মীয় সেলিম ভূইয়া, হানিফ ভূইয়া, তানিশার মা সহ স্থানীয় কয়েকজন। তার সাথে রাজধানীর অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং শীর্ষ স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে বলে এয়ারপোর্ট এ কর্মরত একজন কর্মচারী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান। মূলত সুমন বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এয়ারপোর্ট সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম এর আশকারায়। তার সাথে গভীর যোগাযোগ এর সূত্র আমাদের প্রতিনিধি পায় সুমনের এলাকায়। এলাকার এবং সুমনের সন্তান যেই স্কুলে পড়ে সেই রাজউক মডেল কলেজ এর কয়েকজন মহিলা অভিবাবক আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, সুমনের স্ত্রী লিজা স্বভাবে বেপরোয়া। সে সবসময় বলে বেড়ায়, মহাব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম এর সাথে সমনের সখ্যতা থাকায়, তার স্বামী বড় অনেক অপরাধ থেকে অতীতে রেহাই পেয়েছে। এয়ারপোর্ট সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলামের এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এয়ারপোর্টে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য প্রমান দিয়ে দিতে। তারা ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা মনিরুল ইসলাম তার দায় এড়াতেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি যাদের উদেশ্যমূলক বিশেষ সুবিধা অর্জনে পরিচালনা করেন তাদের প্রতি তার বিশেষ সর্ফটকর্নার থেকে সব সময়। অতীতেও অনেকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমান সহ অভিযোগ দেওয়ার পরেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এই কারণেই এয়ারপোর্টে তার পছন্দের কর্মকর্তা কর্মচারীরা যাত্রী প্রশাসন কেউকেই পরোয়া করে না।
পরিস্থিতি বলছে বিমান নিরাপদে উড়তে না পারা এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান না হয়ে উঠার জন্য দায়ী সুমন সিন্ডিকেট। একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জানান, বিমানের এই ধরনের সিন্ডিকেট ভাংতে না পারলে বিমান কখনও নিয়মনীতির ধারায় ফিরে আসতে পারবে না।

Related Articles

Back to top button