মতামত

জীবন সংগ্রামে নারী এবং প্রিয় শিল্পী ফরিদা পারভীন আপা

সৈয়দা রাশিদা বারী: গীতিকার ফকির লালনের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন (৩১. ১২. ১৯৫৪-১৩. ৯. ২০২৫ ইং) নম্র ভদ্র সভ্য শান্ত সৃজনশীল একজন নারী ছিলেন। যার কোন সন্দেহ নাই, নিঃসন্দেহে অনন্য নারী শিল্পী ফরিদা পারভীন। এর জন্য তিনি সার্বিক পর্যায়ের মানুষের কাছেই প্রশংসিত। তারপরও ব্যতিক্রমী কথা হয়। আসলে সৎ ভাব ও জ্ঞান সাধারণ মানুষের নাই বলেই তো উল্টাপাল্টা কত কি ভাবতে পারে! প্রশংসায় উন্মুখ না হয়ে, দেখা যাচ্ছে সমালোচনায়ও হয় পঞ্চমুখ! প্রিয় ফরিদা পারভিন আপা, উনার সাথে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমারও দেখা হয়েছে।

তার সাথে ওঠা ছবিও অনেক ধরনের আছে। কিন্তু আমি আমার বই ও পত্রিকার কাজের ভিড়ের জন্য লিখার, স্মৃতিগুলো তুলে ধরার সময় পাইনি। গাজী আব্দুল হাকিম দুলাভাইয়ের সাথেও অনেক দেখা হয়েছে এবং তাদের বাসায় গিয়েছি। ফরিদা পারভীনের প্রতিষ্ঠিত ‘অচিন পাখি’ গানের স্কুল পরিদর্শন করেছি। কুষ্টিয়াতে আবু জাফর সাহেবের বাসায়, তার এই কাজ করার কারণ দর্শাতে প্রশ্ন সাহস নিয়ে করেছি। এবং বেয়াদবের মতন আমিই তাকে বলেছি, এতই যদি তাহলে আপনি আপনার যত গান এতকাল করেছেন, হাইলাইটস হয়েছে, আছে তো নানান ভাবে। ওইগুলো বন্ধ করে দিন, বাতিল ঘোষনা দিয়ে ক্যানসেল করুন। কেউ প্রচার করলে আপনার নাম ব্যবহার করলে, গুনা হবে। তাই এটা কেউ করলে, তাকে দণ্ডনীয় অপরাধী বলে গণ্য হবে, এইটা দ্রুত সার্কুলার দিন। আমি তাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম, ছোট হয়ে বড় কথা বলে! কিন্তু উনি আমাকে রাগ করেননি শুধু হামু দিয়ে শুনেছেন এবং তার লিখা আমলে কোরআন জাতীয়, একটি গ্রন্থ আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ফরিদা পারভীনকে কখনোই অবজ্ঞা করে কোন কথা, মন্দ কিছু বলেননি। আল্লাহর প্রেমে কাতর এই প্রফেসর এবং গীতিকার আবু জাফর। ওদিকে লালন দর্শনে আকুল শিল্পী ফরিদা পারভীন। মাঝখানে আমি ব্যাকুল দুই কুলের দুই নাও ভিড়ানোর পরিদর্শনে! এবং আমি ব্যর্থ দুই কুলের দুই নাও একত্রিত করতে পারি নাই! ওই মুহূর্তে যে ছিল আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে, আজ সেও একজন শিক্ষাবিদ বড় ধরনের গবেষক এবং সমালোচক সৈয়দ আবু রায়হান জাকারিয়া চিশতী। দুই দিকে নাও ভিড়ানোর একজন চাইছেন গ্যারান্টি দিয়ে আল্লাহকে পেতে, আল্লাহ প্রেমে মশগুল হয়ে। অপরজন বাউল সম্রাট আধ্যাত্মিক লালনের গানের বাণীর প্রেমে মশগুল! পেতে চাননি কিছুই। শুধু গানের সাথে

ভালোবাসা! বেঁচে থাকার জন্য যেন সেটাই তার ভরসা! অবলম্বন এবং কূল। তাই আবু জাফার আল্লাহর প্রেমের মশগুল হয়ে স্ত্রী ফরিদা পারভীনকে গান ছাড়তে চাপ দিলে, শিল্পী ফরিদা শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, আমি তো গান ছাড়া বাঁচবো না!! ব্যাস এই কথাতেই তাদের বিচ্ছেদ! আজ লালন সংগীতে পৃথিবী খেত, শিল্পী ফরিদা পারভীন। তার স্বনামধন্য কণ্ঠে জয় করেছে পৃথিবী। তিনি তার আনকমন আকর্ষণীয় কন্ঠে মানুষকে ধন্য করে তুলতে একটুও কৃপণতা করেননি! যা নিঃস্বার্থে মানুষে মানুষে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মাঝে আমি আর তাদের সন্তানরা আরো অন্যান্য এই পরিস্থিতি মোকাবেলা দেওয়া অনাথ আসামি, বললেও আমার তো মনে হয় ভুল হবে না। তবে হ্যাঁ আমরা প্রত্যেকে পরিপূর্ণ এবং সন্তুষ্ট। তাদের অবদানে কারো অপূর্ণতা নেই। কন্ঠ সাধক সুর সাধক ফরিদা পারভিন গান ছাড়া কিছু চান নাই। আর আবু জাফর আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর অন্য আর কিছুই চান নাই। কাতর মিনতি ভরে, এটাই শুধু বলেছেন। আমিও আমার লেখা একটি গ্রন্থ গীতিকার আবু জাফর সাহেবকে দিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন এইগুলো আর লিখবা না। এগুলো সব বৃথা পরিশ্রম করা হবে তোমার। পরকালের কাজ করো, ইসলামের পথে চলো। সাহিত্য সংস্কৃতি বাদ দাও। উনি আমাকে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা করার উৎসা দেননি বরং নিরুৎশাহীত করেছিলেন। তবে আবু জাফর সাহেব অনেক সৃজনশীল মার্জিত মানুষ। ফরিদা পারভীন আপাও তাই। দ্বিতীয় বিয়ে করা ফরিদা আপার ছিলো শুধু গানের প্রেমে আকৃষ্টতা রক্ষার্থে। গান ত্যাগ যেন না করতে হয়। তার কন্ঠে শুধু গান বাঁচানোর জন্য। সুর সাধনার জন্য। লালন কন্যা, লালন লালাইতো, লালন সংগীত এর বিশেষজ্ঞ, গান সাধনার সাধক। লালনের গানের প্রেমের টানে, মাত্র বিয়ে করেছিলেন। কোনরূপ দৈহিক শারীরিক মানসিক পিপাসার টানে নয়। যেটা আমি বুঝতে পারলাম, আরো কয়বার তার সাথে সাক্ষাতের পর। এটা আবু জাফর সাহেবও অনুধাবন করেছিলেন। বুঝেছিলেন। তাই আপার উপরে তার কোন অনুরাগ অভিমান, অনুযোগ অভিযোগ একদম ছিলো না। তিনি তাকে রাখেননি স্ত্রী হিসেবে সেটা ঠিক কিন্তু তিনি তার লালন সংগীত অধ্যাবসায় চর্চাতে বাধা হয়েও দাঁড়াননি। চাননি বাধা দিতে। তাহলে নিজের সাথে রাখাতে কি সমস্যা ছিলো? প্রশ্ন আমি করতে ছাড়ি নাই। তিনি মনে করেছেন যে, সাথে রাখলে, তিনি শুদ্ধতাই আল্লাহকে পাবেন না। আবু জাফর সাহেবের একার জীবন, ঘর সংসার, ইসলাম সাধনা ইত্যাদি পরিদর্শনের পর, আর মনের খবর নেওয়ার পর, ওই পথেই রিক্সায় কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন আপার মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তো এক বাক্যে, একমাত্র কন্যা ফরিদা আপাকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভাবেন। নিশ্চয়ই সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আবু জাফর সাহেবকে হার্ট হৃদয় এমন জানালেন। তো তখনও আবু জাফর সাহেবের ছবি তার ঘরে টানানো! মানে জামাই বলতে পাগল এবং অজ্ঞান পঞ্চমুখ! মূলতও তাই ঠিকই তো। কুষ্টিয়ার কিং তার কন্যা ও জামাই, দুই কিংবদন্তি তনয় তনয়া তারই কন্যা জামাই! কিন্তু উল্টিয়ে গেছেন! বুঝলাম যে তখনও তিনি জানেন নাই! সেটাই স্বাভাবিক! প্রথম জেনেছিলেন আমার থেকেই। তবে হক চকিয়ে গেলেও ব্যথা পান নাই। কেননা তিনি তার অত্যাধিক সৃজনশীল কন্যাকে নিজের প্রাণ অন্তর আস্থা মনে করতেন। কন্যার ভালো তো তারো ভালো, সেটাই জানিয়েছিলেন। আমিও সম্মতি দিয়েছিলাম। আমি আবার বিয়াকুবের মত সাহস নিয়ে বলেছিলাম, আবু জাফর সাহেবের ছবি জামাই হিসেবে ঘরে টানিয়েছেন। ওটা এখন রাখা উচিত নয়। টেবিলের এলবামটা নেরে বললাম খালাম্মা এটাও রাখার দরকার নাই। তিনি একটা জ্ঞানের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন ‘কেন আবু জাফর আমাদের কুষ্টিয়ার জ্ঞানীগুণী, বিখ্যাত, এই হিসেবেও কি রাখতে পারবো না? জামাই হিসেবে তাকে নাইবা রাখলাম। ব্যক্তিত্ব হিসেবেই রাখলাম।’ তখনই বুঝলাম যে তিনি আবু জাফর সাহেবকেও জামাই ছাড়িয়ে গিয়ে অনেক বেশি ভালো জানতেন! গভীরভাবে মানতেন। তবে আমি সান্তনা দিয়েছিলাম যেন ভেঙে না পড়েন। যখনই হোক দেরিতে হলেও এক সময় জানবেন তো? আমার জানানো না মানলেও। উনি যেন কষ্টটা মানিয়ে নেন। জীবনটা অনেক কঠিন, তার থেকেও বড় কঠিন, নারী কূলে সংসারে সমাজে দেশে রাস্ট্রে বহির বিশ্বে, প্রতিষ্ঠা পাওয়া। দেখলাম যে সেটা উনিও বোঝেন এবং বিশ্বাস করেন। চা খেয়ে রাস্তায় উঠতেই নাকি উনি উনার প্রাণ প্রেম প্রিয় ফরিদা পারভীন কন্যাকে ফোন দিয়েছিলেন, আমার কথা সঠিক কিনা জানতে!! আমিও রাস্তা থেকেই সঙ্গে সঙ্গে জেনেছিলাম এই খবর। আপাও জানলেন আমি তার মাকে কোনরূপ কষ্ট দিতে, রাগাতে বা ছোট করতে নয়। স্বাভাবিক থাকতে হবে, কন্যার মঙ্গলারথে, দেশ সমাজ রাষ্ট্রের কল্যানার্থে, পৃথিবীকে ভালোবাসার স্বার্থে, মানুষকে লালনের আধ্যাত্মিক কথাই বিমুগ্ধ, রাখার শর্তে, তাকেও মানিয়ে নিতে হবে, সেটা বোঝাতে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম কিছু পেতে হলে, বড় কিছু পৃথিবীতে দিতে হলে তো, কিছু আবার হারাতেও হয় খালাম্মা। সবকিছু নিজের কবজা করে ধরে রাখলে, সবকিছু পাওয়া যায় না। বড় কিছু উদ্ধার করতে ত্যাগও করতে হয়। এটাই স্বাভাবিক। আপনার কন্যা শুধু কুষ্টিয়ার কিংবদন্তী। পৃথিবীর কিংবদন্তীও হতে পারবেন, আপনার দোয়া এবং সহযোগিতা থাকলে। কেননা একজন মানুষ, মানুষ হওয়ার পিছনে, অনেক মানুষের অবদান থাকতে হয়। সমাজে যেটা শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে স্বীকৃত। নারীর মেধা মনন যোগ্যতা পারদর্শিতার অসম্মান করা হয়। তাই নারীর দেওয়া হয় বাধা। কোন সাপোর্ট থাকে না। বাবা মা শিশু থেকে কন্যাকে আগলে রাখেন। কোথাও তার বিকশিত হওয়া চান না। এরপরে স্বামী আগলে রাখেন। কোন স্বামী চান না স্ত্রীর বিকশিত হওয়ার, ঐতিহ্যবাহী পথপ্রদর্শন উন্মোচন। তারপরে পরের স্টেজ সন্তান। পুত্র কন্যা, জন্ম দিতে নারীর বেশ বড় বাধা, জীবন গড়া এবং প্রসারিত হওয়ার পথে। সংসারের চাপ, স্বামীর চাপ, সন্তানের চাপ, এসব সামলিয়ে চলায় সময়ের স্পেস নষ্ট হয় ইত্যাদি। লাস্ট স্টেজ, সন্তান মাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করলেও,, সন্তানদের বিয়ে যখন হয়, বাধার এটাই হল শেষ ধাপ! একদম যেন বিষাক্ত সাপ!! প্রচন্ড কড়া কঠিন এই ধাপ! যেন অকথ্য পাপ! তাই কেউ পারেনা ক্ষমা মানে মাপ করতে। যেহেতু নতুনরা ভাবে সাহিত্য সাংস্কৃতিক করা এটা পাপ। মহাপাপ! তাদের এই ভয়ংকর চিন্তা চেতনায়, আকাশ মাটিও ভয়ে কাঁপিয়ে যায় একরকম!!! পুত্র বধু, আর কন্যা জামাই! এই ধাপ সত্যিই বড় নির্মম! বাইরের নতুনরা, শাশুড়িকে পুরনোভাবে! পুরনো শাশুড়ির উপরে কড়া নির্দেশ বানিয়ে রাখে। দুদিন যেতে না যেতেই সেটা নিক্ষেপ করে। এটাই যেন তাদের ধর্ম একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়! সাহিত্যিক হলে লিখা যাবে না! গীতিকার হলে গানের প্রোগ্রাম আর লাগবে না করা! শিল্পী হলে আর গান গাইতে হবে না! কন্ঠে গজব! গানবাজনা জাহান্নামের ঠিকানা, এইসব বলে। তাদের চাওয়া এবং দাবী আর কয়দিন, জীবন তো শেষই হয়ে গেছে! এখন পরকালের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ নাই। কবরের কাম করতে হবে! ঘরেই থাকতে হবে ধর্মের মধ্যে ডুবে। শুধু করতে হবে আল্লাহ বিল্লাহ। লাল শাড়ি চুরি কপালে লাল টিপ ভালো জুতা স্যান্ডেল ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রশ্নই নাই। ওইসব নতুনদের জন্য। পুরনোদের জন্য নয়। অর্থাৎ শাশুড়ির জন্য নতুন তো কেনা কাটা করা যাবেই না। চকচকা নাউজুবিল্লাহ! পূর্বের যা আছে সেগুলোও রাখা যাবে না। তারা ভাবে এগুলো বিলাসিতা। বয়স হলে বিলাসিতা করা হারাম বয়স্কদের জন্য। কিসের কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক শিল্পী! নতুন মুখের কাছে এসবের পাত্তা নাই! তাদের অবাধ্য হলে সন্তানের কাছে টিকে থাকা দায়! যা শুধু করতে পারবে পুরুষ! পুরুষ পুরুষের যোগ্যতা পারদর্শিতা মেধা মত সবকিছুর স্বীকৃতি পায়! সাপোর্ট পায়! ঠিক যেমন একাধিক বিয়ে করার সাপোর্ট স্বীকৃতি আছে! এমন ভাবে পুরুষের সবকিছু করারই অনুমতি আছে! সেই ক্ষেত্রে নারীর নাই! তবে বাংলাদেশের ফরিদা পারভীন আপাকে লাস্ট পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিলেন গাজী আব্দুল হাকিম, শুরুটা আবু জাফর করলেও। এই কথা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নাই! গাজী আব্দুল হাকিম যদি ছায়া হয়ে আগলে না রাখতেন, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত, শিল্পী ফরিদা পারভীনের কপালের লাল টিপ,, পরনের লাল শাড়ি,, যেটা ছিল ফরিদা আপার পছন্দের। এটা কিন্তু কবেই মারা যেতো! আবু জাফর সাহেব ত্যাগ করার সাথে সাথে!! যেটা আসলে গাজী আব্দুল হাকিম সাহেব, ধরে রেখেছিলেন! ওই বসন কেউ খোলাতে পারে নাই, গাজী আব্দুল হাকিম এর কারণেই। শাশুড়ি একটু ভালো থাকতে চাইলে পুত্রবধূর চোখ টাটায়! বলে ভন্ডামি! নির্লজ্জ ইত্যাদি। একটু ভালো খেলে, বলে বাদরামি, বুড়ো হয়ে গেলেও চাহিদা ইমেজ নুজ কিচ্ছু কমে নাই। আয়না ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি শাশুড়ির ব্যবহৃত এবং প্রয়োজনীয় আসবাব পত্রগুলো, পুরনো বলে, পুত্রবধূ ষড়যন্ত্র করে বিক্রি করে দিয়ে, নতুন কিনে শূন্যস্থান পূরণ করে দেয় না। আর তারা যেটা কেনে, সেটাতে হাত দিতেও দেয় না। ক্লোজ করে নিজের আওতাই নিয়ে রাখে। ঘর কুনো করে রাখার যত পায়তারা পদ্ধতি আছে, দ্রুত অসুস্থ হয়ে যাওয়ার যত কারিকুলাম আছে, মানসিক শারীরিক অবনতি হওয়ার যত রকম মন্ত্র আছে, ব্যবস্থা আছে, সব অর্জনকৃত বিদ্যার প্রভাব ফেলে, শাশুড়ি হয়ে গেছে সেই অপরাধে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর উপরে! বলাই যেতে পারে আরো ২০ বছর জীবনের থেকে সময় কমিয়ে দেয়! সে নিজের প্রচেষ্টায় সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকতে চাইলে, তখন বলে বেয়াদব অসভ্য মহিলা! আর যত রকম অবজ্ঞা করা সম্ভব! যত রকম অপবাদ দেওয়া সম্ভব! যতভাবে শাস্তি দেওয়া সম্ভব! কোনটাই বাকি রাখে না, প্রয়োগ করতে শাশুড়ি হওয়ার দোষে শাশুড়ির উপরে! এইতো এইসব নির্যাতনের শেষ নাই। কিছু কিছু কাজ আছে সেটা মানুষ না করতে পারলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সৃজনশীল তবুও পুত্রবধূরা সেটা করতে বাধা দেয়! আর তখনই শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন! আয়ু রেখা ২৫ বছর থেকে, ৫ বছরে নেমে আসে! মানুষ কিন্তু মনে করে বয়সের কারণে অসুস্থ। আসলে সেটা নয়! সবার ক্ষেত্রেও নয়, নারী সাহিত্য সংস্কৃতি সেবী যিনারা হয়, এটা তাদের ক্ষেত্রে বলছি। সমাজে পুরুষের মেধা পারদর্শিতা যোগ্যতার সম্মান করা হয়। ওই একই কাজ একই জায়গায় নারীর দেওয়া হয় ধিক্কার। অপবাদ। করা হয় অপমান অপদস্থ। প্রিয় শিল্পী, লালন সংগীতের বিশেষজ্ঞ, লালন ভান্ডারী, ফরিদা পারভীনের মা ছিলেন বুদ্ধিমান তাই ওই বিপদে ফরিদা পারভীন পড়েন নাই। আমি তার পরকালবাসি মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। এইজন্য যে তিনি মানিয়ে নিয়েছিলেন কষ্ট না রেখে। এবং তিনি আমৃত্যু প্রিয় ফরিদা পারভিন আপার জন্য দোয়া করে গেছেন। এটাতে ফরিদা পারভিন আপাও মায়ের প্রতি, আর লালনের গানের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে, লালন প্রসারের ক্ষেত্রে, পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য অসংখ্য অবদান রাখতে পেরেছেন। রেখে গেছেন। বাংলাদেশে তাই আমরা হইয়াছি পূর্ণ এবং নিঃসন্দেহে ধন্য। যাহোক তার পরিবারের সবার প্রতি সমবেদনা রইলো। মহান আল্লাহ তার আত্মার শান্তি দিন এবং বেহেস্ত নসিব কবুল করুন। আমীন।

২১. ৯. ২০২৫ ইং. দুপুর পনে ৩টা, রবিবার।

Related Articles

Back to top button