ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে ব্যাপক সাফল্য বেড়েছে রপ্তানি আয়

মাখদুম সামি কল্লোল: সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প (SCMFP) এর আওতায় ২০১৯ সালে চালু হওয়া ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও গোপালগঞ্জ জেলার ২৫টি উপজেলায় ৩০০ ক্লাস্টারের মাধ্যমে ৭৫০০ জন চাষীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রতিটি ক্লাস্টারে ২০ থেকে ২৫ জন চাষী ও প্রায় ২৩ থেকে ২৫ বিঘা জমি নির্ধারিত হয়। চাষীদের আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় প্রক্লল্প থেকে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ উদ্যোগে চিংড়ি উৎপাদন ৪০–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চাষীরা দ্বিগুণ-তিনগুণ আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।
চাষীরা জানিয়েছেন, ক্লাস্টার পদ্ধতি শুধু উৎপাদন বাড়ায়নি, বরং জলবায়ু পরিবর্তন ও রোগবালাইজনিত ক্ষতি কমাতেও সহায়ক হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক চাষী এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্ব-প্রণোদিত ক্লাস্টার ব্যবস্থাপনা, সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখা, বাজার সংযোগ জোরদার করা এবং নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ জরুরি।
চিংড়ি উৎপাদনে ক্লাস্টার পদ্ধতির সাফল্য সত্যিই অসাধারণ, যা রপ্তানি আয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। যেহেতু ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ির উৎপাদন দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই রপ্তানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পদ্ধতির কারণে শুধু উৎপাদনই বাড়েনি, বরং উৎপাদিত চিংড়ির মানও উন্নত হয়েছে।
প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে উৎপাদিত চিংড়ি আকারে বড় হয় এবং রোগমুক্ত থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নত মানের চিংড়ির চাহিদা বেশি। তাই, বাংলাদেশের উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। এই উন্নত মান এবং অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ১৯১৩১ মেট্রিক টন যার বাজারমূল্য ১৯১ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ২৩২৩৮ মেট্রিক টন যার বাজারমূল্য ২৪৮ মিলিয়ন ডলার। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ক্লাস্টার পদ্ধতি দেশের চিংড়ি শিল্পে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে।
চিংড়ি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প-পরবর্তী সময়েও এ উদ্যোগ টেকসই করতে পারলে চাষীদের আয় ও দেশের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।