
টাইমস ২৪ ডটনেট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের কিছুটা হলেও আশাবাদী মনে হচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনা করতে দুই দিন পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প।ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের জানিয়েছেন যে, এই শীর্ষ বৈঠকের লক্ষ্য হবে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, ভূখণ্ড সংক্রান্ত ইস্যুতে ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পৃক্ততা ও চুক্তির অংশ হিসেবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়েও ট্রাম্প রাজি হয়েছেন।ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া গেছে এবং ইউরোপীয় নেতাদের প্রত্যাশা জানানোর সুযোগ হয়েছে।ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডের নেতাদের পাশাপাশি ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েন এবং ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট্টের সঙ্গে কথা বলেন।
হঠাৎ আয়োজিত আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলন থেকে কার্যত বাদ পড়েছেন ইউরোপীয়রা। ফলে ইউক্রেনের স্বার্থ ও ইউরোপের নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিতে বুধবারের ফোনালাপ ছিল তাদের শেষ চেষ্টা।আংশিকভাবে এটি কার্যকর হয়েছে বলেই মনে হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প বৈঠকটিকে ১০-এর মধ্যে ১০ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। একইসঙ্গে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি না করলে তারা খুবই কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হবে বলেও সতর্ক করে দেন।শুক্রবারের বৈঠক সফল হলে দ্রুততম সময়ে পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি দ্বিতীয় বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান ট্রাম্প।তারপরও নিজেদের বিবৃতিতে যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে কিয়েভকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করার কথা ইউরোপীয় নেতারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে পুতিন হয়তো ট্রাম্পকে রাজি করাতে পারেন, তাদের মধ্যে এমন শঙ্কাও আছে।পোল্যান্ড বলছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউরোপের বোঝাতে হবে যে রাশিয়াকে বিশ্বাস করা যায় না। অন্যদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস জোর দিয়ে বলেছেন, নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এ সংক্রান্ত পরবর্তী বৈঠকে ইউক্রেনকে রাখতে হবে। রাশিয়া যদি কোনো ছাড় না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমরা ইউরোপীয়রা চাপ আরও বাড়াবো এবং বাড়াতেই হবে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প বারবার কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ভূমি বিনিময়ের কথা উল্লেখ করেছেন— যা ইউক্রেন ও ইউক্রেনের বাইরেও গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যে তিনি হয়তো পুতিনের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়ে ইউক্রেনের বিশাল এলাকা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।বুধবার সকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফাদেভ আবারও বলেছেন যে, ২০২৪ সালের জুনে পুতিনের দেওয়া শর্ত থেকে রাশিয়ার অবস্থান বদলায়নি।সে সময় পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়ার আংশিক দখলে থাকা চারটি অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিৎঝিয়া থেকে ইউক্রেন সরকার সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের প্রচেষ্টা ত্যাগ করারও শর্ত দিয়েছিলেন তিনি।
সর্বোচ্চ পর্যায়ের এসব দাবি কিয়েভ বা তার ইউরোপীয় অংশীদার কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে রাশিয়াকে কোনো অঞ্চল ধরে রাখতে দিলে তারা সেটাকে ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের সোপান হিসেবে ব্যবহার করবে।এই হুমকি মোকাবিলার একটি উপায় হতে পারে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা—যা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি হিসেবে কাজ করবে।ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর প্রকাশিত বিবৃতিতে কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা বলেছেন, এই নিশ্চয়তার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টার্মার জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে।ট্রাম্পের চুক্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাত চলছে আর আমরা কোনো কার্যকর সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি-যা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর একটি বাস্তব পথ হতে পারে। প্রেসিডেন্টের চেষ্টার ফলস্বরূপ এখন সেই সুযোগ এসেছে।গত বসন্ত থেকে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং গঠন প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে—যেখানে রাশিয়াকে ইউক্রেনে আরও অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখার বিষয়ে কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।বুধবার ওই জোট জানিয়েছে, তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত, যার মধ্যে রয়েছে শত্রুতার অবসান ঘটলে একটি নিশ্চয়তা বাহিনী মোতায়েন—যদিও এই বাহিনীর কাঠামো, গঠন ও ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। দোনেৎস্কের তীব্র সংঘর্ষপূর্ণ দোব্রোপিলিয়া অঞ্চলের কাছে মস্কোর সেনাদের হঠাৎ অগ্রযাত্রার প্রসঙ্গ টেনে জেলেনস্কি বলেন, পুতিন এমন ভান করছেন যেন নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারছে না।আমি ট্রাম্প ও আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের বলেছি যে পুতিন ধোঁকা দিচ্ছেন, এমন মন্তব্য করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দেশগুলোকে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। ট্রাম্প অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক হলেও তিনি হয়তো ইউক্রেনে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা বন্ধ করাতে সক্ষম হবেন না। তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি… কিন্তু তারপর বাড়ি ফিরে দেখি, কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে রকেট আঘাত করেছে আর মৃত মানুষ রাস্তায় পড়ে আছে। তাই আমার মনে হয় সম্ভবত এর উত্তর হবে— না।