বাংলাদেশ

সমুদ্রের ৪০ মিটার গভীরে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণের দাবি

টাইমস ২৪ ডটনেট : গভীর সমুদ্রে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আসছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রে ৪০ মিটার গভীরে মৎস্য শিকারের অনুমতি চেয়ে আসছি কিন্তু অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ট্রলারগুলো গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারের ফিটনেস থাকা সত্ত্বেও আইনের যাঁতাকলে আমাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
বুধবার ১৩ আগস্ট ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করে আর্টিসান ও মেকানাইজ ট্রলার মালিক সমিতি এই অভিযোগ করে।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি মোঃ মাসুম বলেন,
দীর্ঘদিন যাবৎ আধুনিক প্রদ্ধতিতে মাছ শিকার করার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে দাবি জানানো হলেও তারা আমাদের কথা আমলে নিচ্ছেন না। যেখানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গভীর সাগরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিক পরিমান মৎস্য আহরণে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভারতের জেলেদের সুবিধা দেওয়ার জন্য গভীর সাগর থেকে মাছ আহরণে আমাদেরকে বিরত রাখা হয়।
ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরা একটি গুরুতর সমস্যা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, প্রতিটি দেশের সমুদ্রসীমার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে এবং অন্য কোনো দেশের জেলেদের সেই সীমা লঙ্ঘন করে মাছ ধরা সম্পূর্ণ অবৈধ। আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে। এই বিশাল অঞ্চলের মৎস্য ও অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদের ওপর বাংলাদেশের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
কিন্তু, প্রতিনিয়ত ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে অবৈধভাবে মাছ শিকার করে। এর ফলে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্থানীয় জেলেরা জীবিকা হারাচ্ছেন। অবৈধভাবে মাছ শিকারের অভিযোগে প্রায়শই বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের হাতে ভারতীয় জেলে ও তাদের ট্রলার ধরা পড়ে। এসব জেলেদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০-এর অধীনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা। এছাড়াও, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন রাডার ও ফিশ ফাইন্ডার ট্র্যাকিং সিস্টেম, দিয়ে সন্দেহজনক ট্রলার শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বস্তুত কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর টহল ও নজরদারি সঠিক ভাবে না থাকায় ভারতীয়রা বেশি সুযোগ পাচ্ছে।এ বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযোগ করে আসতেছি। তারপরও মৎস অধিদপ্তর নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ড কোন আশানুরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
আমাদের দেশে অধিক পরিমান মাছের প্রজনন হয়ে থাকে, যা বেড়ে উঠে আমাদের সমুদ্র সীমানায়। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ আহরণ করে নিয়ে যায়।
আমাদের সমুদ্রসীমায় ৩৭৩ প্রজাতির মাছ আছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৩০ প্রজাতির মাছ শিকার করতে পারছি। উন্নত প্রযুক্তির অভাবে বাকী ৩৪৩ প্রজাতির মাছ শিকার করতে পারছি না। যেখানে বিদেশী জেলেরা জিপিএস, সোনার, রাডার, নেভিগেশন চার্ট, ইকো সাউন্ডার, ফিস ফাইন্ডার, মেরিন ডেটা ব্যাংকের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেখানে আমরা এখনো প্রথাগত কাঠের ট্রলার ও ম্যানুয়্যাল জাল ব্যবহার করি। আমরা প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে গভীর সাগরে মাছ আহরণ করার জন্য অনুমতি চাই।
তিনি আরো বলেন, অনুমতি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করলে দেশের জেলে ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পেলে আমাদের জেলেরা মাছ শিকার করে দেশের সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবে।
তখন ভারত সহ ভীনদেশি জেলেদের প্রভাব গভীর সাগরে কমে আসবে। গভীর সাগর থেকে অধিক পরিমান মৎস্য আহরণ করতে পারলে দেশের বাজারে মাছের সরবরাহ বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ন্যায্য মূল্যে মাছ ক্রয় করে খেতে পারবে এই বিষয়টি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও মৎস উপদেষ্টার দৃষ্টি আকষণ করছি।

Related Articles

Back to top button