
টাইমস ২৪ ডটনেট: গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ইসরায়েলের নিন্দা জানানো বা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে কেউ তাদের সংকল্প দুর্বল করতে পারবে না। আমাদের শত্রুরা দেখবে, আমরা এক শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ মুষ্টি হয়ে তাদের ওপর প্রবল আঘাত হানব। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদিত পরিকল্পনায় যুদ্ধ শেষ করার পাঁচটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- হামাসকে নিরস্ত্র করা, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, গাজা উপত্যকা সামরিকীকরণমুক্ত করা, নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বাইরে একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন করা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রথম ধাপে গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর কেন্দ্রীয় গাজার শরণার্থী শিবির ও বন্দিদের অবস্থান সন্দেহভাজন এলাকাগুলো দখলে নেওয়া হবে। কয়েক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ধাপের অভিযান শুরু হবে। সঙ্গে মানবিক সহায়তা বাড়ানো হবে।
তবে এ পরিকল্পনা জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। জার্মানি সামরিক রফতানি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এটি গাজার ‘বিধ্বংসী’ পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেবে।জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে ব্যাপক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড, অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ বাড়বে। হামাস একে ‘নতুন যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এর জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
দেশের ভেতর থেকেও বিরোধিতার সুর উঠেছে। গাজায় থাকা ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মির পরিবারের আশঙ্কা, এই পরিকল্পনা তাদের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলবে। হোস্টেজেস ফ্যামিলিজ ফোরাম হেডকোয়ার্টার্স বলেছে, এটি জিম্মি ও সেনাদের জন্য ‘বিপর্যয় ডেকে আনবে’।যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলক নীরব অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজা পুরোপুরি দখল করা হবে কি না, তা ‘মূলত ইসরায়েলের ব্যাপার’। বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি অংশেই ২১ লাখের প্রায় সব নাগরিক গাদাগাদি করে আছে। জাতিসংঘের হিসাবে, গাজার ৮৭ শতাংশ এলাকা হয় সামরিকীকৃত জোনে, নয়তো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশাধীন।যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অধিকাংশ গাজাবাসী একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা এখন কার্যত দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইসরায়েল কঠোর অবরোধ নীতি আরোপ করে খাদ্য, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশ সীমিত করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১ হাজার ১৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।