
টাইমস ২৪ ডটনেট :ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে সংগঠিত হওয়া সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে কম খরচে স্বাচ্ছতার ভিত্তিতে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)’র সাধারণ সদস্যবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারন সদস্যবৃন্দের পক্ষেরসাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাদ্দেম হোসেন, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব নুরুল আমিন, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আকবর হোসেন মঞ্জু, সাবেক নির্বাহী সদস্য মোস্তফা মাহমুদ, সাবেক সদস্য হক জহিরুল (জুও) এর স্বাক্ষরিত স্বারকলিপি দেয়া হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান একটি অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ বিগত স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে একটি দুর্নীতিগ্রস্থ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, যার ফলে হাজার হাজার গরীব, নিরীহ কর্মী শোষণের শিকার হন এবং জাতীয় ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়।
তখনকার সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন বায়রা’র সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ও দাতোশ্রী আমিন নূর এবং তাদের সাথে আরো সংশ্লিষ্ট ছিল সাবেক সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ।
তাদের তৈরি সিন্ডিকেটটি মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নিকট হতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা সংগ্রহ করে, যা আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থা (ILO, IOM, UN, RMMRU) ও দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন থানায় মামলা চলমান এবং দুদক ও সিআইডি’র তদন্তাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয়া আরো ১৪ টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে সিন্ডিকেট প্রথা নেই।
সিন্ডিকেটের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমস্যাসমূহ,
(১) মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে কর্মী পাঠানোর জন্য লাইসেন্স অন্তর্ভুক্তির কোন ক্রাইটেরিয়া বা স্বচ্ছতা ছিলোনা বরং সিন্ডিকেট চক্র ৫-৭ কোটি টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স যুক্ত করেছিল। প্রত্যেক কর্মী থেকে সিন্ডিকেট ফী বাবদ অতিরিক্ত আদায় করেছিল ১,৫২,০০০ টাকা। মেডিকেল চেক-আপ বাবদ কমিশন নিয়েছিল কর্মী প্রতি ৩,০০০/- টাকা। যার ফলে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ও দুই দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে।
(২) সরকার অনুমোদিত ৯৫% রিজুটল এজেন্সী বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে।
(৩) অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রমবাজার বার বার বন্ধ হয়েছে।
(৪) যে সকল নিয়োগকর্তা বিনা খরচে কর্মী নিতে চেয়েছিল তারা সিন্ডিকেট ফী’র কারণে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে পারেনি, এই সংখ্যাও লক্ষাধিক।
(৫) এজেন্সির সীমাবধতার কারণে চূড়ান্তভাবে বর্হিগমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ১৭,০০০ কর্মীসহ মোট ৫০,০০০ কর্মী মলয়েশিয়া যেতে পারেনি। সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার পর চাকুরী, বেতন ও বাসস্থান না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট না হলে কি সুবিধা হবে?
(১) সিন্ডিকেট করার মূল কারণ হলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করা। মালয়েশিয়াগামী কর্মী প্রতি ৫০০০ রিঙ্গিত অনলাইন পদ্ধতি FWCMS-কে দিতে হতো। সিন্ডিকেট না হলে কাউকে অতিরিক্ত চাঁদা দিতে হবে না, ফলে কর্মীরা স্বল্প খরচে বিদেশ যেতে পারবে।
(২) বার বার শ্রাম বাজার বন্ধ হবে না, দুই দেশের সুনাম নষ্ট হবে না বরং সরকারের সুনাম ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে।
(৩) জনশক্তি রফতানিতে অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ হবে।
(8) RBA (Responsible Business Alliencc)-এর সদস্য কোম্পানিগুলোতে বিনা খরচে কর্মী প্রেরণ করা যাবে।
(৫) সকল লাইসেন্সের মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে, বেশী কর্মী প্রেরণ করা যাবে, ফলে কর্মী, এজেন্সি ও দেশের অর্থ সংরক্ষিত হবে।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট না করে কম খরচে কর্মী পাঠানোর বিকল্প প্রস্তাব ও করণীয়ঃ
MOU পরিবর্তন কর্মী পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করবে দুই দেশের সাথে MOU-যে উল্লেখিত উক্ত ধারা সংশোধন করে মালয়েশিয়া শ্রমিক প্রেরণকারী অন্য ১৪ টি দেশের মতো মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তা বা বাংলাদেশ সরকার স্বচ্ছতারভিত্তিতে রিক্রুটিং এজেন্সী ঠিক করবো। ফলে সিন্ডিকেট করার সুযোগ থাকবেনা।
২. অভিবাসন খরচ কমানো ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগঃ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুক কর্মীদের সরকারের যৌক্তিক নির্ধারিত খরচ নিশ্চিত করার জন্য BUET-APPS-এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ডাটা ব্যাংক তৈরী করতে হবে। উক্ত ডাটা ব্যাংক থেকে
রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী সংগ্রহ করবে এবং কর্মীরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এজেন্সিকে টাকা দিবে। ফলে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকেরও স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং সিন্ডিকেটকেও টাকা দিতে হবেনা।
৩. মালয়েশিয়া সরকার লিমিটেড লাইসেন্স চাইলে করণীয়
ক) বাংলাদেশ থেকে জাপানে কর্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়, বিক্রুটিং এজেন্সীকে ভালিকাভুক্ত করেছিল। প্রয়োজনীয় কিছু ক্রাইটেরিয়া সংযোজন বিয়োজন করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে রিক্রুটিং এজেন্সী সিলেকশনের জন্য মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হতে পারে।
খ) মালয়েশিয়া সরকার যদি একান্তই লিমিটেড লাইসেন্সের মাধ্যমে কর্মী নিতে চায়, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১টি সরকারী এজেন্সী BOESL-
Main Agent we, One Stop Service Center-এর মাধ্যমে অন্যান্য ইচ্ছুক ডিটিং এজেন্সীর নিজেদের সম BOESL কে একটি সার্ভিস চার্জ দিয়ে সরকার নির্ধারিত খরচে মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আমাদের প্রত্যাশাঃ সাবেক সরকারের সিন্ডিকেট চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অপচেষ্ঠা কেউ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে একটি স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা এবং মানবিক নেতৃত্বে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ ইউনুস স্যারের নোবেলজয়ী নেতৃত্বে ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে, সেই সঙ্গে আপনার আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে একটি স্বচ্ছ, ন্যায্য এবং সবার অংশগ্রহনমূলক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন সম্ভব।