
এস.এম.নাহিদ :খ্যাতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমন আজ আমাদের মাঝে আর নেই। বুধবার (৩০ জুলাই) গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ টার দিকে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। অগণিত পাঠক, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের হৃদয়ে গভীর বেদনা রেখে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন।ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।
সাঈদুর রহমান রিমন ছিলেন দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এর আগে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং সেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলানিউজ২৪ডটকমের ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেটিভ ইনচার্জ ছিলেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি দৈনিক সংবাদ, মানবজমিন, মুক্তকণ্ঠ, বাংলাবাজার পত্রিকা ও দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সিনিয়র সদস্য, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) সিনিয়র সহসভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সদস্য এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটির (বিএসসি) প্রধান উপদেষ্টা।
একজন সংবাদসৈনিক হিসেবে তিনি ছিলেন আপোষহীন, নির্ভীক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। সাংবাদিকতার দীর্ঘপথে কখনোই তিনি ক্ষমতার কাছে মাথা নত করেননি। সত্য প্রকাশে ছিলেন অবিচল, অবিচল ছিলেন ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধে। দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও পেশাদারিত্বের পরামর্শক সাইদুর রহমান রিমন ছিলেন এমন এক সাংবাদিক, যিনি যেখানে অন্যায় দেখেছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে গেছেন। তিনি জানতেন এই পথ কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু কখনো পিছপা হননি।বস্তুনিষ্ঠ, সাহসী এবং সত্যভিত্তিক সাংবাদিকতার জন্য জীবনে বহুবার মামলা-মোকদ্দমা ও প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তবু একবারের জন্যও তাঁর কলম থেমে থাকেনি। প্রতিটি মামলায় তিনি আইনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তাঁর নির্ভেজাল সততা ও পেশাগত ন্যায়পরায়ণতা।তাঁর মৃত্যু সংবাদে দেশের সাংবাদিক সমাজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মীরা তাঁর স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন এক অনন্য পথপ্রদর্শক— অনুপ্রেরণা, সাহস ও নির্লোভ চেতনায় উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত।
সাঈদুর রহমান রিমন শুধু সাংবাদিকতাই নয়,একজন আদর্শিক স্বামী এবং কন্যা সন্তানের পিতা।সেই ৭২ থেকে সাঈদুর রহমান রিমন সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। একজন দক্ষ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে আমার।পারিবারিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলাম আমরা।তার লেখা প্রতিটি রিপোর্ট ছিল দেশের আকোচিত।এমনকি তার রিপোর্টেই কক্সবাজারে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের জট খুলে যায়।তিনি অত্যন্ত দক্ষ ও কৌশলী একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যার কলমের লিখনি এতোটাই ধারালো এবং তীক্ষ্ণ যে, তার প্রতেকটি রিপোর্ট সফলতা পেয়েছে শুধু মাত্র দক্ষতার কারনে।আর এই দক্ষতা আছে বলেই সফলতা ও যথেষ্ট পেয়েছেন।দক্ষতার ফলেই তিনি ১১ টি জাতীয় পুরস্কার পেয়ছেন। পেয়েছেন দেশ সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি।
আজ যখন তিনি চিরবিদায় নিলেন, তখন তাঁর শূন্যতা শুধু একটি পরিবারের নয়, সমগ্র সাংবাদিক সমাজের। তিনি রেখে গেছেন সততার এক উজ্জ্বল ইতিহাস। রেখে গেছেন ন্যায়ের পক্ষে নির্ভয়ে দাঁড়াবার এক অনন্য চেতনা।আমরা তাঁর সহকর্মীরা, প্রিয় পাঠকবৃন্দ এবং সাংবাদিক সমাজ, মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করি—আল্লাহ তাআলা যেন সাইদুর রহমান রিমন ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ যেন তাঁদের এই শোক সইবার শক্তি ও ধৈর্য দান করেন।
আজ আমরা হারালাম একজন সত্যিকারের মানুষকে, একজন দেশপ্রেমিক সাহসী সাংবাদিককে, হারালাম আমার লালিত প্রেরনার উৎসকে। তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও কর্মই আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে রইবে আজীবন।