
মাখদুম সামি কল্লোল: রবিবার ২৭ জুলাই, জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ট্রাক বাস ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এর যৌথ উদ্যোগে মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনসহ ৮ দফা দাবী এবং সড়ক পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে’ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম লিখিত বক্তব্য বলেন।
৫ আগষ্ট ২০২৪ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর হতে সারাদেশে বিশৃংখল অবস্থায় পরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃংখল রাখা এবং সড়ক পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রেখে সুশৃংখলভাবে সরকারের কার্যক্রমকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আমরা এযাবত নিরলশভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
এর ফলে অন্যান্য সেক্টরের মত পরিবহন ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা শাজাহান খান, খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ও ওসমান আলী গংদের শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পরিবহন ব্যবস্থাকে আমরা স্থিতিশীল রেখেছি।
সম্প্রতি সরকারের নির্দেশনায় ২০ ও ২৫ বছরের পুরাতন বাস ও ট্রাক সড়ক থেকে অপসারনের জন্য বি,আর,টি,এ’র কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের মালিক-শ্রমিকরা আঞ্চলিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে করে সারাদেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অচলাবস্থার সৃষ্টির আশংকা দেখা দেয়। এ বিষয়টি আলোচনা ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ২০ জুলাই তারিখে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃত্বদানকারী ৩টি সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বিভাগীয় মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে এক যৌথ সভা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মালিক এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর মালিকদের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার সমুন্নত রেখে সড়ক ব্যবস্থাপনাকে সচল রাখার জন্য নিম্নলিখিত দাবী সমূহ আগামী-১৫ কার্যাদিবসের মধ্যে নিরসন করার জন্য সরকারকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে দাবী সমূহ নিরসন না হইলে অপারগ হয়ে মালিক ও শ্রমিকরা যৌথভাবে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
দাবী সমূহঃ-
১। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫নং ধারাসহ অন্যান্য আমাদের সুপারিশকৃত ধারাগুলি সংশোধন করতে হবে।
২। বানিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করতে হবে। তাছাড়া সরকারের মূল লক্ষ্য যেহেতু পরিবেশ দূষন থেকে রক্ষা পাওয়া, এর সাথে একমত পোষন করে আমরা জানাইতে চাই পরিবেশ মূলত নষ্ট করে যে সকল গাড়ীর ব্যবহৃত জ্বালানী ভাল থাকে না, লুব্রিকেন্ট ভাল ব্যবহার করা হয় না বা সময় মত পরিবর্তন করা হয় না এসব কারনে। গাড়ীর চেসিস ছাড়া ইঞ্জিনসহ সকল যন্ত্রাংশ পরিবর্তন যোগ্য। তাই আমাদের প্রস্তাব যে সকল গাড়ী ফিটনেস পাবে না বা বায়ু দূষন যন্ত্রের মাধ্যমে পরিবেশ দূষন করে বলে প্রমানিত হয় সেসকল গাড়ী নতুন-পুরাতন বিবেচনা যাই হউক না কেন চলাচলে অযোগ্য ঘোষনা করা হইবে। পূর্বে পুরাতন গাড়ী অপসারনের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল মেয়াদউত্তীর্ণ গাড়ী শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচল করিতে পারিবে না। লোকাল জেলায় বি.আর,টি,এ’র ফিটনেস পাওয়া সাপেক্ষে চলাচল করিতে পারিবে। উক্ত বিষয়টি বহাল রাখতে হবে।
উল্লেখিত সমস্যাবলী নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বি,আর,টি,এ কর্তৃক ২০ ও ২৫ বছরের পুরাতন গাড়ীর বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখিতে হইবে।
৩। বাজেটে বানিজ্যিকভাবে চলাচলকারী যানবাহনের উপর আরোপিত দ্বিগুন অগ্রীম আয়কর (প্রিজাস্পটিভ ইনকাম ট্যাক্স) কমিয়ে পূর্বের ন্যয় বহাল রাখিতে হইবে। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক ছোট মালিকের আয় সীমা ৩ লক্ষ টাকার নিচে, সুতরাং তার এআইটি সমন্বয় করার সুযোগ নাই। অন্যদিকে ব্যাংক/লিজিং কোম্পানী থেকে লোনের মাধ্যমে নেয়া গাড়ী স্ব-স্ব কোম্পানী/ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন থাকে এবং মালিকরা তাদের সাথে ডীডের মাধ্যমে গাড়ীর দেনা পরিশোধ করে থাকেন। সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোষ হওয়ার পর স্ব-স্ব মালিকের নামে গাড়ী রেজিট্রেশন হয়। তার পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংক/লিজিং কোম্পানীর টিন নাগারের মাধ্যমে এআইটি জমা হয়। ইহাতে মালিকের কোন লাভ হয় না।
৪। মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসাবে বানিজ্যিক রিকন্ডিশন যানবাহন (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার) আমদানীর মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১২ বছর করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইংল্যান্ড, জাপান, জার্মান এ সকল দেশের রিকন্ডিশন গাড়ী বর্তমানে আমাদের দেশের নতুন গাড়ীর চেয়েও আরামদায়ক, টেকসই পরিবেশ বান্ধব এবং দামও তুলনামূলক অনেক কম। যাহাকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হইবে।
৫। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ী থানায় আটক হলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান রহিয়াছে। যাহা বাস্তবে। কার্যকর করা হয় না। ইহা কার্য্যকর করিতে হইবে।
৬। মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরাতন যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা তৈরী করতে হবে।
৭। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন (অটো-টেম্পু, অটোরিক্সা) সহ বি,আর,টি,এ, কর্তৃক অ-অনুমোদনবিহীন হালকা যানবাহনের পৃথক লেনে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই এসমস্ত যানবাহন মহাসড়কে একত্রে চলাচলের কারনে হয়ে থাকে।
৮। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুততার সাথে ডেলিভারী দিতে হবে এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে।
অতএব, সড়ক পথে যাত্রী পরিবহন ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা সচল রাখার স্বার্থে ১১ আগষ্ট তারিখের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাইতেছি। অন্যথায়, সারাদেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে আগামী মঙ্গলবার ১২ আগষ্ট সকাল-৬ টা থেকে শুক্রবার ১৫ আগষ্ট দুপুর ২ টা পর্যন্ত, ৭২ ঘন্টার জন্য সকল প্রকার বানিজ্যিক পরিবহন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকিবে।
সড়ক পরিবহন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। জাতীয় অর্থনৈতিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহনে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিয়া চলিয়াছে। তাই এই সেক্টরকে সু-শৃংখল, যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনামুক্ত ও চাঁদাবাজমুক্ত করে উন্নত যাত্রী সেবাবান্ধব-সার্বজনিন পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
এই সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ, কার্য্যকরী সভাপতি এম, এ, বাতেন, মহাসচিব মোঃ সাইফুল আলম, সহ-সভাপতি হাজী মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জনাব রমেশ চন্দ্র ঘোষ, সহ-সাধারন সম্পাদক জনাব এম, হুমায়ুন কবির, সাবেক সাধারন সম্পাদক জনাব কফিল উদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক-সভাপতি জনাব ফারুক তালুকদার সোহেল, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আব্দুর রহিম বক্স দুদু, সাধারন সম্পাদক জনাব হুমায়ূন কবির খান প্রমুখ।