মতামত

মাইলস্টোন স্কুল নাড়িয়ে দিলো বাংলাদেশসহ বিশ্ব

সৈয়দা রাশিদা বারী:গত ২১.৭.২০২৫ ইং সোমবার, দুপুর প্রায় সোয়া ১টাই এফ – ৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলামের শেষ ফাইনাল প্রশিক্ষণকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরে যায় উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস চলা ঘরের উপরে! সেটাই আসলে হায়দার আলী ভবন।এ বিমান দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে সোনার মত কচি শিশুগুলো ঝলসে যায়! এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ২৪ এপ্রিল ২০০২ সালে অব. কর্নেল নূরুন্নবী। কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করতে করতে মাহরিন চৌধুরী ম্যাডাম প্রায় ২০জন শিশুর জীবন বাঁচালেন! কিন্তু তিনি নিজেকে শেষ রক্ষা করতে আর পারেন নাই। ঝলসে যাওয়া শিশুদের সাথী হয়ে যান নিজেও! বার্ন ইউনিটে অনেক নিষ্পাপ শিশুর সাথে চিকিৎসাধীন অবস্থায তিনি নিজেও একই দিনে মারা গেলেন! যেন একজন অভিভাবক, একজন শিক্ষক, একজন মা, বুকের শিশুদেরকে বুকে নিয়েই মারা গেলেন!!!

একই পথিক মাসুকা মিস তিনিও মারা গেলেন! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ মাফ করো। তোমার দুনিয়ায় তোমার মানুষকে তুমি আর কতো ভাবে কষ্টের মধ্যে ফেলবা? যারা মারা গেলেন, তাদের বেহেস্তে নসীব করো। যারা বেঁচে রইলেন, তাদের সুস্থ জীবন, নেক হায়াত দান করো। আমিন। মানুষ অর্ধেক মরে দুর্যোগে এইভাবে! মানে এই বাচ্চাদের শোকে তো আরো মানুষ মরবে! তারপরে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত পাইলট! পাইলট তো একজন কিন্তু এর জন্য মারা যাবে অনেক জন! মানুষের অলক্ষে অজান্তে মারা যাবে! রয়ে রয়ে ধুকে ধুকে নানান ভাবে মারা যাবে! এটাই নিয়ম কিন্তু মানুষ দেখে একজনকে। একজনের জন্য আরও অনেকে মারা যায়, চিন্তা ক্রোধ, রোগে শোকে সেটা কেউ দেখেনা! দেখবে না! এটাই নিয়ম। এই যে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যু! এটাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আওতায় আসে। ঝড় সাইক্লোন বন্যা বর্ষায়ও কত বানভাসী মানুষ ভাসে! খরা রৌদ্রতাপে কত মানুষ দহন দ্রোহে মরে। আকাশের বজ্রপাত, বাতাসের বাজ, বিদ্যুৎ পড়ে মরে! এমনকি আনন্দ ভ্রমণ কালেও, ছাড়া পাইনা। গঙ্গারজলে পদ্মায় ডুবে গড়াই নদীর বানে, শুকনো গড়ায় বালির মধ্যে বালি চড়ে এবার মরেছে! মরে তো ফ্যামিলির একজন! একজনের প্রতিক্রিয়া কয়জনের জীবনের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়!? মারা যায়!? তার কি কেউ হিসাব করে মিলায়!! নদী গহ্বরে তলিয়ে বা হারিয়ে কতজন শেষ হয়। একেবারেই উধাও হয়েও যায়! মরার যে কত রকম বিচিত্র সব আনাগোনা! খবর কেউ নেয় না? কখন যে কোন দুর্যোগে কে অজান্তে কোথায় মারা যায় কে জানে!? জঙ্গলের নানান পশু কর্তৃক, পশুর থাবাই অথবা কামড়ে কতজনের জীবন যায়। নানান ভাবে পৃথিবীতে মানুষ মরে। মরার পথ মোহরা কম নয়! জাসদের এক সময়ের নেতা, মরহুম নুর আলম জিকুর একমাত্র পুত্রের মৃত্যু হয়েছে, ভ্রমণের আনন্দে মুগ্ধ অবস্থায়, বন্যপ্রাণী, এক হাতি নামের পাগলা হস্তির আক্রমণে! এই ফেসবুকের আমলেই তো! দুর্যোগে মানুষ মরার শেষ নাই! আর অর্ধেক মরে রাজনৈতিক মহা কুণ্ডলে আক্রান্ত হয়ে! গুম খুন জেল জরিমানা হাজত এর পানিশমেন্ট বহু রকম এই মৃত্যুর বন্দোবস্ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যায়ের এবং মূর্খ অধম ধনী গরিব এমনকি জ্ঞানীগুনিও ছাড় পাই না! খারাপ কিছু পুরুষের জন্য ধর্ষণ এবং বলাৎকারের শিকার হয়েও অনেক শিশুর প্রাণ যায়! আমি তো বলেছি একজনের মরার পিছনে অনেকজনের মৃত্যু কারণ হয়। তারপর যা বাঁচে এর অর্ধেক মরে সামাজিক জিলাপির প্যাঁচে। তবে এখানে প্রাপ্ত বয়সের নারীর হার বেশি। গলায় দড়ি, বিষ খাওয়া, নদীতে ঝাঁপ দেওয়া, অনেক ধরনের। পুরুষ সংক্রান্ত জটিলতায় কত নারীর যে জীবন যাই! হদিস নাই! পুরুষ সংক্রান্ত নানান জটিলতায় নারীদের পেটের সন্তানও ধ্বংস করা হয়!! রহস্য আনন্দের মতো পুরুষ মন চাইলেই বলে দেয়, এই বাচ্চা আমার না। এই বাচ্চা আমি মানি না। বাচ্চা আরো পরে হলে মেনে নেবো। সেই বাচ্চাটা আমার হবে ইত্যাদি! মনে হচ্ছে যেন গড়ে হাজারে ১০ জন মানুষ স্বাভাবিক নরমালে মরে। বাকি সব অস্বাভাবিক এবং তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের মৃত্যু! আমার নিজের খেলার সাথীরাই তো অনেক জন নাই! তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে অপ্রাপ্ত বয়সে! তাও প্রায় ১০ জন তো হবেই! বিয়ে হওয়ার পরে, বিয়ে হওয়ার আগে, তারা মারা গিয়েছে অন্যের হাতে! রিমা সিমা সাহিদা, নাসরিন ফাতেমা আরো অনেকে। আর তাদের মা বাবারাও মেয়েকে হারিয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেছেন। হাজারে ১০ জন আল্লাহর হুকুমে যাদের আজরাইল সরাসরি জান কবজ করেন। আর তো সবই অস্বাভাবিক মৃত্যুর আসামি অথবা গোলাম! কার যে কখন কোন হালে মৃত্যু হয় হচ্ছে বলা দায়! এর আগেও বিমান প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণকালে এক্সিডেন্ট করেছেন। কিন্তু এইরকম ঘটনা বিড়ল। যেমন ১৯৯৮ সালে, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে, মারা গিয়েছে দুইজন। ১. পাইলট প্রশিক্ষক রফিকুল ইসলাম (২৪) ২. কো পাইলট ফারিয়া লারা (২৫)। আমার নিজের একমাত্র ফুকুর বড় পুত্র, পাইলট বিমান প্রশিক্ষক ছিলেন। যিনি ভাষা সৈনিকও ছিলেন। তিনি অনেক কষ্টে প্রাণপণ চেষ্টায়, সেটা সাগরে নিয়ে ফেলেছিলেন! তার ঘড়ির চেইনে এবং হাতের বিভিন্ন জায়গায় এটা লেখা ছিলো! সাগরে ফেলার ফলে বিমানে যারা ছিলেন তারাই শুধু মারা গিয়েছিলেন। আর বিমানও আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয় নাই। অন্য আর কারো কোন ক্ষতিও হয়নি। আমার কাছে এই কালেকশনটা আছে, আমার আপন চাচা বাচ্চু চাচার, লেখা, একটা গ্রন্থে। ১৯৫১ সাল থেকে ইউএসএ সিটিজেন শীপ, ইউএসএ অবস্থানরত, প্রকৌশলী, বিশ্ব ভ্রমণকারী, প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, সৈয়দ রফিউদ্দিন ওয়াহেদ আলী ওরফে সৈয়দ আর ডাব্লিউ আলী (বাচ্চু মিয়া) (২৪ জুন ১৯২৪ – ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ইং) চাচার লেখা একটা গ্রন্থের মধ্যে এটা আছে। এবং সাবেক প্রিন্সিপাল, অধ্যক্ষ বাংলা কলেজ ও ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের, জাহানারা হকের লেখা একটা গ্রন্থে এই তথ্য পেয়েছি। কেননা এই পাইলট তো ছিলেন জাহানারা হকের আপন বড় ভাই। আমার ভাষা সৈনিক বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে সৈয়দ জালাল উদ্দিন ওয়াহেদ আলী, ডাকনাম পুনু মিয়া (১৯২৬-৩ জুন ২০০৮ইং)’র কাছ থেকেও শুনেছি। অন্যান্য ভাবেও জানা আছে। যেহেতু আমার তো তখন জন্ম হয়নি। আমার বাবা মায়ের বিয়েই হয়নি তখনও। ইডেনের প্রিন্সিপাল জাহানারা হকের আপন বড় ভাই, ওই বিমান প্রশিক্ষক পাইলটের নাম- সৈয়দ ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ মোস্তফা ‌দদকামাল হাই, ডাকনাম- টুলু মিয়া (১৯৩১ – ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ ইং) তখন আশ্বিন মাস ছিলো। আমি জানি যে আমার একমাত্র ফুপু, সৈয়দা সেলিমা নুরজাহান, ডাক নাম খুকু, খুকি, ফ্যালিসিয়া- (১৯০৬ – ১৩ ই মার্চ ১৯৬৩ ইং) ফুপা আগেই মারা গিয়েছিলেন, খান বাহাদুর – সৈয়দ আব্দুল হাসনাত মোহাম্মদ আব্দুল হাই (১৮৮৪ – ১৯৪৫ ইং) তিনি ছিলেন ডেপুটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট‌‌। আর ফুপু তখনকার নারী সংগঠনের সভানেত্রী এবং ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভক্ত। কাজী নজরুল ইসলামকে অর্থবৃত্তি সহযোগিতা করতেন। তখন তো আর এখনকার মতন ফোন ইমেইল whatsapp ইমো ইত্যাদি এবং বিকাশ এসব ছিল না। তাই আমি ওই সব চিঠিপত্র ও ভাউচার দেখেছি। আমার ফুপাতো ভাই, জাহানারা হকের তৃতীয় ছোট ভাই, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সৈয়দ শরফু উদ্দিন মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাই – আনু (১৯৩৬ – ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২) বলেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন। আমি তখন বুঝি নাই তাই নেই নাই। মানুষ তো টাকা পয়সা নেয়। কাগজ আবার কেউ নেয় নাকি? তাই আমিও নেই নাই! আমার ফুফু স্বামীকে হারিয়ে, তার বড় পুত্রের মৃত্যু সইতে পারেন নাই! আনু ভাই খুব ব্রিলিয়ান্ট ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা লেখক এর সাথে গল্প বলতে পছন্দ করতেন। ফুপু পাইলট পুত্র টুলুর মৃত্যুর পর থেকে টুলুর পছন্দের খাবার আর কখনোই খেতেন না! তিনি শুধু কান্নাকাটি করতেন! ভাষা সৈনিক পাইলট টুলু ভাইয়ের আদরের এক কুকুর ছিলো। সেই কুকুরকেও আর কেউ খাওয়াতে পারে নাই! কারণ কুকুরটি খেলার সাথে, লাফিয়ে লাফিয়ে টুলুর হাতের খাবার খেতো। তাই তাকে অন্য কেউ খাওয়াতে পারে নাই! শুধু টুলু ভাই যে পথ দিয়ে আসতেন, সেই পথে ওই কুকুর থেকেছে আর ডেকে ডেকে কেঁদেছে। হাউ মাউ করে কেঁদেছে! অবশেষে মারা যায়!! আমার ফুপু পুত্রকে হারিয়ে, তার পালিত কুকুরকে হারিয়ে, সেই যে অসুস্থ হয়েছিলেন, আর কোনদিনও সুস্থতা ফিরে পান নাই। এর আগে পরপর হারিয়েছেন, ফুপু তার শিক্ষাবিদ শিল্পপতি বাবা- সৈয়দ নাসির উদ্দিন ওয়াহেদ আলী ওরফে সৈয়দ ওয়াহেদ আলী মিয়া (১৮৭৪ – ৩.৩ ১৯৩৭ইং) স্টক করে দুই বছর মত বিছানায় থেকে মারা যান! শিক্ষাবিদ বড় ভাই- সৈয়দ মুজাফফর উদ্দিন ওয়াহেদ আলী, ডাকনাম খোকা মিয়া ( ১৯০৫ – ১৯৪৬ ইং)। মারা যান- ডবল বিদ্যুৎ/ বাজ/ ডাক বা বজ্রপাত পড়ে)! প্রথমবার বজ্রপাত আঘাত করে, খোকা চাচার আপন খালার বিয়ে অনুষ্ঠান রাজবাড়ীর মীর বাড়ির পোস্ট অফিসের কলোনি থেকে। (প্রখ্যাত কন্ঠ শিল্পী মরহুম আনোয়ার উদ্দিন খানের মায়ের বিয়ে অনুষ্ঠানে) কয়দিন পর জ্ঞান ফিরলেও ডান হাত এবং পাও তার অবশ অকেজো হয়ে পড়ে! ফলে সেখান থেকে ফিরে তিনি শুধু বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী লেখা, বিশাল জঙ্গলে অবস্থিত, আমার দাদার বাগান বাড়ির, আটচালা টিনের ঘরের বিশাল লাইব্রেরীতেই থাকতেন। বাম হাতে বহু সাহিত্য লিখতেন। সাহিত্য আমার দাদাও লিখেছেন! কিন্তু তিনারা অকৎসাত অপ্রত্যাশিতভাবে অপ্রাপ্ত বয়সে অসময়ে হঠাৎ পঙ্গু হয়ে মৃত্যুবরণ করাতে কোন গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন নাই! গুরুত্ব দিয়ে কোন তথ্য, তার ভারতের শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইত্যাদির ভবিষ্যৎ আলাপ পরিকল্পনা কালেকশন কিছুই তার থেকে কেউ নেই নি! বাড়ির কাজ চলছিল সেটাও আর সংস্কার করতে পারেন নাই। দাদার জীবনের ঐতিহ্যবাহী কর্মের অনেক মূল্যবান তথ্য কাগজপত্র ছিলো! ওসব লেখা ও অন্যান্য কাগজপত্রও ৭১ সালের যুদ্ধের মধ্যে বন্যা দুর্গত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে! ইদুর বাদর উইপোকাতেও খেয়ে গেছে! পরবর্তী জেনারেশন মা চাচিরা সংরক্ষণ করতে পারেন নাই! বরং দাদার এইগুলো রাখার আলমারি, বিরাজ, সেলফ ইত্যাদি আসবাবগুলো থেকে ওই সমস্ত নামিয়ে রেখে, তারা অন্য কাজে লাগিয়েছে!! আমি তো বন্যায় ভাসিয়ে নেওয়া দেখলেও অবুঝ ছিলাম! ইদুর বাদুড় উইপোকায় খাওয়া দেখলেও এগুলো মূল্যবান সম্পদ রেখে দিতে হবে। এসব কিছুই বুঝতাম না! মা চাচীরা শুধু টাকা পয়সা, সোনা রুপা, হিরা জহরত সংরক্ষণ করেছেন আর সব ফেলে দিয়েছেন। সংরক্ষণ করতে হলে তো কষ্ট করতে হয় সেটা করেন নাই। জমা জমি সম্পদ সব ভূতে খাইছে। দখল বেনাম ইত্যাদি করে নিয়েছে! কারণ আমার চেয়ারম্যান চাচা ওগুলোকে পাত্তা দিতেন নাই। দেখতেন না। তার শুধু ভোট হলেই হয় আর অন্য কিছু না। আর তাছাড়া সম্পত্তি করে অন্যরা খেলে তো তাদের সেবা করা হয়। এজন্য ফিরিয়ে নেওয়া হয় নাই। দাদা যেখানে যার দিয়ে রেখেছিল ওই ভাবেই ছিল। শিক্ষাবিদ খোকা চাচা পঙ্গু হয়ে যে আটচালা টিনের ঘরে অবস্থান করতেন, ওটা ছিল শিক্ষাবিদ শিল্পপতি দাদার ব্যক্তিগত অফিস। সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলকদের পৃষ্ঠপোষক, বই প্রেমিক দাদার বিশ্বের বই কালেকশন করা, তার প্রিয় লাইব্রেরী ঘর! দাদা বেঁচে থাকা অবস্থায় বাঘা যতীন কাজী মিয়াজান আরো অনেকেই ওই ঘরে এসেছেন দাদার সাথে সাক্ষাৎ করতে। দাদা বলতেন নাকি, আমার মৃত্যুর পর আমার লাশ যা খুশি করিও তোমরা! কিন্তু আমার লাইব্রেরীর সকল গ্রন্থ কারিকুলাম রক্ষা করিও। এইগুলোর অযত্ন করিও না! যে ঘরে শরৎচন্দ্রও এক সময় পড়াশোনা গবেষণা এবং অবস্থান করেছেন। যখন উপন্যাসিক শরৎচন্দ্র আমার বজ্রপাত ঘটে মারা যাওয়া খোকা চাচার গৃহ শিক্ষক ছিলেন। বিভূতিভূষণ অবস্থান করেছেন, যখন তিনি পথের পাঁচালী লিখেন, যতদিন ধরে লিখেছিলেন, স্থায়িত্বভাবে ওখানেই থেকে। আমার দাদারই পৃষ্ঠপোষকতায় এবং পরামর্শে তিনি ওই জঙ্গলে থেকে ওই গ্রন্থ লিখেছিলেন! তার পিছনে নিয়োগ করে দিয়েছিলেন অনেকগুলো চাকর বাকর সহযোগী। ওই লাইব্রেরী ঘরেই অবস্থান করতেন ডান পাশ পঙ্গু হয়ে গেলে খোকা চাচাও এবং তিনি ওই ঘরেই মারা গেলেন দ্বিতীয়বার বাজ পড়ে! তখন বারান্দায় বসে ছিলেন! বারান্দার কাছেই একটি কাঁঠাল গাছে বাজ পরে অর্থাৎ বজ্রপাত ঘটে গাছটি জ্বলে যায় এবং চাচাও দ্বিতীয়বার সর্বাঙ্গনে ঝলসে যান!! এরপর ফুপুর মা মানে আমার দাদি এই পুত্রকে হারিয়ে আর সুস্থ থাকতে পারলেন না! দাদি মারা গেলেন বড় পুত্রের মৃত্যুর দুই বছর পর!! হযরত আল্লামা সৈয়দা মছিরুন্নেসা খাতুন ( ১৮৮২ – ৩০ আগস্ট ১৯৪৮ ইং) ঠিক এই দিনই আমার ভাষা সৈনিক বাবা- সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (১৯২৬-৩ জুন ২০০৮) ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ফার্স্ট ডিভিশনে মেট্রিকুলেশন পাশ করার রেজাল্ট নিয়ে ছুটে এসে দেখেন মা নাই! আল্লাহর কাছে চলে গেছেন! ডাক্তারের অভাবে বাবা ভাই মা উপযুক্ত চিকিৎসা অভাবে ধুকে ধুকে চলে গেলেন!!! বোনের স্বামী চলে গেলেন!!! দেশ প্রেমিক ভাষা সৈনিক বাবা প্রতিজ্ঞা করলেন ডাক্তারি পরবেন তিনি! কিন্তু ভাষা আন্দোলন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে, তাকে সেটা কমপ্লিট করতে দেয়নি! তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ওই পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয়নি!! এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয় এবং আঘাত। একটি জীবনের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িত থাকে! জীবনের উত্থান পতন ঘটে! অস্বাভাবিক জীবন মান চলা এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলোই তার জন্য দায়ী। তাই কোন মানুষ দ্বারা, কোন মানুষের না হোক দুর্যোগ মোকাবেলার মত সমস্যা। ক্ষতি ভয়াবহ জীবন মৃত্যুর ঝুকিও না আসুক। ২১.৭.২০২৫ সোমবার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে আমার বড় পুত্র সৈয়দ আবু রায়হান জাকারিয়া চিশতির একমাত্র কন্যা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সৈয়দা আরিফা ইবনাথ (রাইসামনি) স্বয়ং উপস্থিত ছিলো! আল্লাহর রহমতে কোন ক্ষতি হয় নাই তবে ও অনেক ভয় পেয়েছে! ভয়ে আর ঐ‌ স্কুলে যেতে রাজি নাই! আমাদের দেশে এক এক সময় এক একটা দুর্যোগ এমন হুমকির মধ্যে মানুষকে ফেলছে যে কি বলবো! যেমন গার্মেন্টস রান্না প্লাজা ধ্বংসের পর থেকে, এই ব্যবসা এমন ভেঙে পড়েছে! এর পূর্বে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প এটা একটা লাভজনক, সম্ভাবনাময় টেকসই ব্যবসা ছিলো। এখনো ব্যবসা হচ্ছে বটে কিন্তু ভিতরের অবস্থা ভালো নয়! বেহাল অবস্থায় মানুষ তবু ব্যবসা করে! অনেকটা মিডিয়া ব্যবসার মতো, যেন হয়ে পড়েছে! লচ মেনে সেবামূলক, গরিব দুঃখী লোকজন করে খায় তাই মালিক বন্ধ না করে চালান। যেহেতু ওই দিযে মালিকের কিছু হয় না। মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য ব্যবসা ধরে রেখেছেন এই আর কি। এটাও একটা দেশের ঐতিহ্য সাংস্কৃতি শিল্প কি না? সামর্থবানেরা মানুষের সেবা করার জন্য করছেন। যেমন আমরা লেখকরাও তো লাভ ছাড়া লস মেনে লেখালেখি করি, সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে, না ঘুমিয়ে রাত জেগে। তেমনি সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশন, সাংবাদিকতা করেন। সম্পাদক প্রকাশক প্রকাশ করেন। আসলে এটাই তো ইতিহাস ঐতিহ্য এবং শিল্প। আজ যে মাইলস্টোন স্কুল নাড়িয়ে দিল বাংলাদেশসহ বিশ্ব। মালিক তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এই শিল্প। শিক্ষকরা শিশুদের মানুষ করার ব্রত নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট এবং বহাল ছিলেন। শিল্প মনে করে নয় কিন্তু এটাও শিল্প। আর শিল্প মানেই ঐতিহ্য। ঐতিহ্য মানেই দেশের প্রাণ দশের প্রেম গর্ব। এই তো শিশুদের সাথেই শিক্ষিকা মারা গিয়েছেন!! সাহিত্যকর্মীরা সাহিত্য শিল্প বাঁচিয়ে যান জীবন দিয়ে! যুগে যুগে কালে কালে, এটাই ধারা। চিকিৎসা অর্থ অভাবে হতে পারেন না কিন্তু সাহিত্য ঠিকই বাঁচিয়ে রাখেন! সম্পাদকও কিন্তু তার পত্রিকা এভাবেই ধরে রাখেন! সাহিত্য সংস্কৃতি সেবা করেন! রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন, সেটাও এই একই রকম সেবামূলক শিল্প। তবে দেশের হাল পরিস্থিতি ইতিহাস করার ধারক বাহক সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং পত্র-পত্রিকা! এটায় সবচেয়ে মহৎ শিল্প! আর এই শিল্পগুলোর সাথে যারা সংযুক্ত, যেমন গীতিকার কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক সম্পাদক। নিশ্চয় ইনাদা উদাস উদাস ত্যাগী। কণ্ঠশিল্পী অভিনেতা অভিনেত্রী অন্যান্য কলাকুশলীগন তারাও উদাস উদার এবং ত্যাগী। চলচ্চিত্র জগত, বেতার টেলিভিশন দেশের বড় একটি সম্মান সম্পদ ঐতিহ্য। তারাই তো চালিয়ে নেন এবং বাঁচিয়ে রাখেন! যাবতীয় সৌন্দর্য!! তাই কেউ কিন্তু মূল্যহীন নয়, যার যার জায়গা থেকে সবাই সম্মানিত, মোটেই লোভী নন। এই সংস্কৃতিক জগতে রিক্সাওয়ালা গরীব দুঃখীও রয়েছেন জড়িত। দেশ এবং দশের উন্নয়ন উন্নতির সাথে প্রত্যেকে জড়িত। শিশুরাও দেশের ভবিষ্যৎ। যার প্রতি সুদৃষ্টি রাখা সরকারসহ দেশের সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এই উদার মানসিকতা সকলের মধ্যে থাকলে, দেশের সবাই ভালো থাকবে। দেশ হবে উন্নয়নমুখী সুখময়। আসুন আমরা ক্ষতিগ্রস বিধ্বস্ত হওয়া মাইল স্টোন স্কুলসহ পরিবার গুলোর জন্য দোয়া কামনা করি। আমিন।

২২.৭.২০২৫ ইং, রাত ২:৩০ মি: মঙ্গলবার

Related Articles

Back to top button