বাংলাদেশ

কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এমডির বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, টাইমস ২৪ ডটনেট :
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদশে) লিমিটেডের এমডির বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প মন্ত্রণালয়। গত ২৯ জুন চিনি ও খাদ্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান স্বাক্ষরিক এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর রাব্বিক হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, এই কোম্পানি অধীন ১৩ টি ওয়্যার হাউস আছে। তবে হঠ্যাৎ করে সবগুলো কর্মকর্তাকে নতুন এমডি আসার পর বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ওয়্যার হাউসে বর্তমানে কর্মরত হারুন অর রশিদকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে বদলি করা হয়েছে। সৌমিক হাসান রুপমের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। তার চাহিদা মেটাতে না পারায় রুপমকে ঢাকা থেকে কম গুরুত্বপর্ণ পঞ্চগড় সুগার মিলে বদলি করা হয়। রুপম কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আসন্ন সিবিএ নির্বাচনে সাধারণ সম্বপাদক প্রার্থীও ছিলেন। মো. দেলোয়ার হোসেনকে বরিশাল ওয়্যার হাউস থেকে নাটোর সুগার মিলে, আলমগীর হোসেনকে পাবনা থেকে নাটেরের গোপালপুর সুগার মিলে, গোডাউন ইনচার্জ সাজেদুর রহমান তপনকে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে। এছাড়া আর কয়েকজনকে অনৈতিকভাবে কোন কারণ ছাড়াই ওয়্যার হাউস থেকে সরিয়ে বন্ধ বা কম গুরুত্ব সুগার মিলে বদলি করেন।
গত ২৮ এপ্রিল এক অফিস নোটিশে তাদের বদলি করা হয়। যাদের বেশিরভাগই শেখ হাসিনা সরকারের সময় দোসর হিসেবে কাজ করেছে। যা অধিদপ্তরে ব্যাপক প্রচার রয়েছে। সংশ্লিরা অভিযোগ করছেন, প্রতিটি বদলি থেকে সর্বনিন্ম ২০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকা আবার তিনি সরাসরি গ্রহণ না করে তারই আনুগত ও করপোরেশনের সাবেক চ্যোরম্যান ( বর্তমানে বরখাস্ত) লিপিকা ভদ্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বোিরয়ে আসবে। এখানেই ক্ষ্যন্ত হননি মীর রাব্বিক। মৌসুমের আখ মাড়াইয়ের জন্য তিনি কখন মাঠ পর্যায়ে যাননি। এসি রুমে বসে তিনি শুধু আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে আগে যারা গুরুত্বপূর্ণ এই পদে ছিলেন তারা আগে মাঠ পর্যাায়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিদের সঙ্গে কথা বলতেন। আখ চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা প্রণোদনা দিতেন। এ কারণে আখ চাষও হতো চাহিদার চেয়ে বেশি। কিন্তু মীর রাব্বিক দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়মিত অফিস করলেও বসে থাকেন এসি রুমে। চাষিদের কাছে যাওয়াতো দূরের কথা তার অফিসে আসলেও তিনি তাদের সাথে দেখা করেনন না, এমনকি চাষিদের সঙ্গে ঠিক মত কথাও বলেন না। এ কারণে ওই জেলায় আখ চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার আখ মাড়াই মৌসুমে চাষীদের আখ চাষে প্রলুব্ধ করতে নানা ধরণের প্যাকেজ, প্রচার-প্রচারণাসহ প্রান্তিক চাষীদের চাহিদা মোতাবেক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে থাকে। তার অনিয়মের কারণে সরকার বঞ্চিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে। দেশের একমাত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সব ধরণের মদ উৎপাদন করতে পারে। তবে বাংলা মদ তারা উৎপাদন করতে পারে না। এই মদ তৈরি করতে সম্প্রতি ৪০ লাখ প্লাাস্টিকের বোতল গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। যেখানে প্রতি পিস বোতল ১৪ টাকা করে কেনা হয়। বিন্তু এই বোতলের বাজার দর ৭ টাকা করে। এক্ষেত্রে প্রতি বোতলে অতিরিক্ত ৭ টাকা বেশি গুণতে হয়েছে সরকারকে। এছাডাও গত বছর ২ লাখ ৪২ বক্স বিদেশী মদ বিক্রি করা হলেও এ চলতি অর্থ বছর সেখানে বিক্রি দাঁড়িয়েছে ২ লাখে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকারকে এ ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে। অনিয়ম, প্রশাসনকি কর্তৃত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ উঠেছে মীর রাব্বকিরে বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদশে) লিমিটেড। এটি একটি সমন্বতি কারখানা। এখানে চিনি, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানটিাইজারসহ বিভিন্ন ধরণের স্পিরিট ও দেশী-বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়। কারখানার মূল পণ্য চিনি হলেও কোম্পানিকেক বাঁচিয়ে রাখছে ডিস্টিলারি পণ্য মদ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর রাব্বিক হাসান বলেছিলেন, যেসব অভিযোগ আসছে তা কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। কেননা আমার কাছে প্রতিটি বিষয়ের ডকুমেন্ট আছে। তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের তাছে উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে অন্য বছরের তুলনায় এবার রাজস্ব আয়ও অনেক বেশি হবে। যা আগামী জুলাই মাসে সংশ্লিষ্ট্র দপ্তরে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

Related Articles

Back to top button