
মীর সাজু, ভোলা থেকে :ভোলার চরফ্যাশনে সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুল শিক্ষক ছেলে মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মাকসুদুর রহমান (৪৫) শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ছেলের বিচার চেয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মা বিবি ফাতেমা। ছেলের হাতে মারধরে গুরুত্বর আহত হয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা।
শুক্রবার (৪ জুলাই) উপজেলার দুলারহাট থানার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা বিবি ফাতেমার অভিযোগ, তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে। মাকসুদুর রহমান তার বড় ছেলে। বড় ছেলেকেই লেখা পড়া করিয়েছেন। সে লেখা পড়া শেষে শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেন। এক সময় তার স্বামী হারুন মোল্লাকে নিয়ে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বসবাস করতেন। ছেলে মাকসুদ চাকরী নেয়ার পর থেকে তার ছোট তিন ভাইকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন। মাকসুদ তার নিজের নামে বাবার সম্পত্তি লিখে নেয়ার জন্য প্রায় সময় মারধর করত। ৮ বছর আগে বাবা-মা দু’জনকেই মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন ছেলে মাকসুদ। পরবর্তীতে বাবা-মার আশ্রয় হয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ১নং ওয়ার্ডে কৃষক ছেলে সফিকের কাছে। সেখানে গিয়ে মাকসুদ তার বাবাকে ব্যাপক মারধর করে। অবশেষে অসুস্থ হয়ে ৬ মাস আগে মৃত্যু হ বাবা হারুন মোল্লার। ফের শুক্রবার সকালে ছেলে মাকসুদ মিলে বহিরাগত লোকজনদের নিয়ে মুজিবনগরের সম্পত্তি দখলে নিতে ভাই সফিককে মারধর করে এসময় মা বাঁচাতে গেলে মাকেও ছেলে মাকসুদ তার লোকজনদের নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। এই বিষয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিবি ফাতেমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষক বানালাম, অথচ সেই ছেলের হাতেই আজ আমি লাঞ্ছিত। ছেলে মাকসুদের অত্যাচার সইতে না পেরে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগরে গিয়ে কৃষক ছেলের কাছে আশ্রয় নিয়েছি।
আবার জমির জন্যআমার গায়ে হাত তুলেছে। আজ ছেলে মাকসুদকে নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে খুব কষ্ট হয়। কারন তার হাতে তার বাবা মারধরের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যু বরণ করেন।
মাকসুদের ছোট ভাই সফিক ও ছিদ্দিক বলেন, তার ভাই মাকসুদকে তার বাবা শিক্ষিত করেছেন। ওই সময় তারা জমিতে কৃষি কাজ করেছেন। ভাই লেখা-পড়া শেষে শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরী নেন। তার পর থেকে বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য বাবা-মাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করতেন। এমনকি স্কুল শিক্ষক ভাই মাকসুদুর রহমান তাদের সম্পত্তিও দখলে নেন। তাদেরকে মুল ভূখন্ডের মধ্যে আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বাড়ী থেকে উৎখাত করে। পরে তারা আশ্রয় নেয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগরে। শুক্রবার সকালে মুজিবনগরে গিয়ে জমি দখলে নিতে সফিককে মারধর করেন ভাই মাকসুদ। এসময় সফিককে বাঁচাতে মা এগিয়ে এলে মাকেও ব্যাপক মারধর করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এই বিষয়ে স্কুল শিক্ষক মাকসুদুর রহমান বলেন, ভাইদের দ্বারা মা প্রভাবিত হয়ে এহেন অভিযোগ করেছেন, অভিযোগটি সঠিক নয়।
দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইফতেখার জানান, “এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মা-বাবার ওপর সন্তানের হামলা সবচেয়ে ঘৃণিত ও ন্যাক্কারজনক অপরাধ।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ও দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য জোড় দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।