সারাদেশ

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ ভয়ানক জুয়া

টাইমস ২৪ ডটনেট: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা দেশটির সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়ে ওয়াশিংটন পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।সাবেক মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু পি. মিলার এক বিশ্লেষণে বলেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ একটি ভয়ানক জুয়া। ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু পি. মিলার এই বিশ্লেষণে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৯ জুন কয়েকদিন আগে করা অতিরঞ্জিত বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন যে “আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেবে কিনা।” যদি এই যুদ্ধ শুরু করার বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় একটি অস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধে প্রবেশ করবে এবং ফাঁদে আটকা পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকবে।
“ফরেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে অ্যান্ড্রু পি. মিলার আরো বলেছেন, ‘এই সম্ভাবনা অনেক আমেরিকানের জন্য ইরাক যুদ্ধের বেদনাদায়ক স্মৃতিকে সঠিকভাবে এবং ন্যায্যভাবে পুনরুজ্জীবিত করবে। ট্রাম্প যিনি পূর্বে ইরাক যুদ্ধের বিরোধী বলে দাবি করেছিলেন, এখন তার মিত্রদের সাথে নিয়ে ইরানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপকে সীমিত পরিধি এবং একক লক্ষ্যবস্তুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ধ্বংস করতে চাইছেন যা ইসরাইল একা ধ্বংস করতে পারে না। এটি ট্রাম্পের চিন্তাভাবনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে পারে, তবে সেই সিদ্ধান্তও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি বহন করবে যার মধ্যে রয়েছে পারস্য উপসাগরে মার্কিন সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধ নেয়া বা বিদেশে আমেরিকানদের উপর আক্রমণ, যা ইরানে মার্কিন সম্পৃক্ততাকে আরো গভীর এবং দীর্ঘায়িত করতে পারে।’

এই বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে করে যে তারা ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের GBU-57 বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা দিয়ে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যদি তারা এই ধরণের বেশ কয়েকটি বোমা ফেলে তবুও এটি ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করবে।

এই মার্কিন বিশ্লেষক স্পষ্ট করে বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় নির্বোধ কল্পনা হল যে তারা মনে করে যে ‘ইরানের শাসনব্যবস্থা সহজেই পতন হবে এবং যে সরকার তার স্থলাভিষিক্ত হবে তা তার জন্য ভালো হবে।’অন্যদিকে, মিলার জোর দিয়ে বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় এবং ইরানের বিরুদ্ধে একটি নতুন সামরিক অভিযানের কথা বলছে, অন্যদিকে বেশিরভাগ আমেরিকান ইরানের বিরুদ্ধে তাদের দেশের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী।এই প্রবন্ধে মিলার মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন যে ইরান সম্পর্কে বর্তমানে তাদের মনে যেসব পদক্ষেপ এবং লক্ষ্য রয়েছে যেমন পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা বা সরকার উৎখাত করা তার কোনোটিই তার অভিপ্রেত লক্ষ্য অর্জন করবে না, যেমন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থায়ীভাবে ধ্বংস বা ওয়াশিংটনের পক্ষপাতী এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলকে তাদের হস্তক্ষেপ এবং দখলদারিত্বের অপরাধমূলক ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন যার মধ্যে রয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকান যুদ্ধ এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনে কয়েক দশক ধরে ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার দখলদারিত্ব।মিলার উপসংহারে বলেন, ‘ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের সিনিয়র সদস্যদের এই দুই সপ্তাহের বিলম্বকে বাস্তবতা পরীক্ষা ও বোঝার জন্য ব্যবহার করা উচিত এবং একটি চুক্তি করতে এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা করা উচিত।’ যদি ট্রাম্প এটি না করেন, তাহলে তিনি আমেরিকা এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তাকে একটি বেপরোয়া জুয়ার ফলাফলের সাথে যুক্ত করবেন যা পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো জড়িয়ে ফেলতে পারে এবং আরো একটি বিপর্যয় তৈরি করতে পারে যা কয়েক দশক ধরে আমেরিকানদের তাড়া করবে।

Related Articles

Back to top button