
টাইমস ২৪ ডটনেট: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। শুক্রবার এই সংঘাত দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে তেহরান, হাইফা ও বেয়ারশেভা শহরে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় শত শত মানুষ হতাহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে নেওয়া কূটনৈতিক উদ্যোগে উত্তেজনা কমার মতো কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস করেছে এবং একদল ইরানি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা ওই দিন সন্ধ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের কাছে একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে অন্তত ৪৫ জন আহত হন। এর মধ্যে ১৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র বেয়ারশেভা শহরে পড়লেও কেউ হতাহত হননি।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, এই ধরনের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে দীর্ঘ সময়ের সংঘাতের জন্য। প্রতিদিন আমাদের অভিযান চালানোর সুযোগ বাড়ছে, আর শত্রু সংকুচিত হচ্ছে।জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, যতক্ষণ না ইরানের পারমাণবিক হুমকি দূর হচ্ছে, যুদ্ধযন্ত্র ভেঙে ফেলা হচ্ছে এবং আমাদের ও আপনাদের জনগণ নিরাপদ হচ্ছে ততক্ষণ আমরা থামব না ।তেহরানের পাল্টা হামলার মধ্যে তৃতীয়বারের মতো একটি হাসপাতালেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জেনেভায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, আমরা আমাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা তখনই সম্ভব, যদি ইসরায়েল তার হামলা বন্ধ করে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানান, তিনি ইসরায়েলকে আক্রমণ কমাতে বলবেন না। তার ভাষায়, যখন কেউ জয়ী, তখন তাকে থামাতে বলা কঠিন। তবে আমরা আলোচনায় প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করুক। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা যুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। এই সময়কেই কূটনৈতিক আলোচনার শেষ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি ফরদোর ওপর হামলা চালানো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আবারও ‘শান্তির সুযোগ দিতে’ উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন এক আগুন জ্বলবে, যা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ব্রিটেন তার তেহরান দূতাবাসের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে। সুইজারল্যান্ডও তাদের দূতাবাস বন্ধ করেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমানবন্দর খুললে তারা নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনবে।গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। ইসরায়েল জানায়, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতেই এই অভিযান। ইরান এরপর পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।ইসরায়েলের প্রথম হামলায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলি বিমান নির্বিঘ্নে আকাশপথে অভিযান চালাচ্ছে। তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি হাসপাতালসহ বেশ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। আর ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ২৫ জন নিহত ও কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন।এই যুদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ইরান-সমর্থিত ইরাকি, ইয়েমেনি ও লেবাননি মিলিশিয়াদের সম্পৃক্ততা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হিজবুল্লাহ যেন এই যুদ্ধে না জড়ায়। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি বাহিনীকে তেহরানে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ও বাসিজের সদরদফতরে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন।