topআন্তর্জাতিক

ইরানের ওপর যেকোন মুহূর্তে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র

টাইমস ২৪ ডটনেট: চরম সীমানায় উপণীত হয়েছে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের পরিণতি। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবার সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যেকোন সময় যুক্ত হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, কিন্তু দেশটিতে হামলা চালানো হবে কি না- সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। একটি গোয়েন্দা সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে রাজি হতেও পারে- এমন চিন্তায় হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন ট্রাস্প। তবে তিনি ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ফোর্দো-তে মার্কিন হামলার কথা বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর নতুন এবং বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড’ ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে এটাই ওই অঞ্চলে সবশেষ বড় সামরিক পদক্ষেপ। সিএনএন-এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যাকারি কোহেনের বরাত দিয়ে আরেক মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট গত বুধবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১,১০০ ফুট উচ্চতার পারমাণবিক শক্তিচালিত রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইউরোপে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে পাঠানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের তৃতীয় মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলে তা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে বলে জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে এসব কথা বলেন তিনি। এদিকে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে ইরানের সর্বশেষ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ সেনাবাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা তীব্র করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘরিবাবাদী যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে তবে ইরানের হাতে আর কোনো পথ থাকবে না। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করবো, আগ্রাসীদের শিক্ষা দেবো ও নিজেদের রক্ষা করবো।


দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে ইরান ও ইসরায়েল। গত বুধবার রাতভর তেল আবিব লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে তেহরান। বিষয়টি নিশ্চিত করে এসব হামলা প্রতিহতের দাবি করেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। তেহরানের দাবি, তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতিরও দাবি করেছে তেহরান। ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও। এর আগে ইরানের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলার দাবি করে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানায়, তেহরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের রকেট লঞ্চারগুলোতেও হামলার দাবি করে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু প্রশাসনের দাবি, ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১ হাজার ড্রোন ছুড়েছে ইরান। এদিকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধবাজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ এর আওতায় ১৪তম দফার হামলা চালায় গতকাল বৃহস্পতিবার। এ হামলায় এক গুচ্ছ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের হামলায় যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বলে দাবি করেছে ইরানের গণমাধ্যম। ইরানী সংবাদমাধ্যামের দাবি, ইসরায়েলের কয়েক স্তর-বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই রাজধানী তেলআবিবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার দৃশ্য সম্প্রচার করার ব্যাপারে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবারের হামলাগুলোর ছবি ও ভিডিও ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা গেছে, আতংকিত ইসরায়েলি প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালাচ্ছে। কেউ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে। কেউবা আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে দৌড় দিচ্ছে। এ সময় ইসরায়েলিদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো ভয়ঙ্কর শব্দের সাইরেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলের আকাশে অন্তত ৫০টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। যেগুলোর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো একাধিক নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইসরায়েলি হতাহতের খবর প্রচার করার ওপর বিধিনিষেধ থাকলেও কোনো কোনো ইসরায়েলি সূত্র কেবল বৃহস্পতিবারের হামলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের হামলায় ইসরায়েল সরকারের বহু কৌশলগত স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সামরিক ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর। এসব স্থাপনায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁতভাবে আঘাত হানায় ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের কার্যকারিতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বলেছে, ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবের একটি হাসপাতালের কাছে অবস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা দপ্তরকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার হামলা চালানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওই হাসপাতালের ভেতরের লোকজনকে আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এদিকে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, ওই কেন্দ্রটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত উপাদান ও সরঞ্জাম রয়েছে। সেখানে এমন সব প্রকল্প বানানো হচ্ছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।

এবারই প্রথম নাতাঞ্জে হামলার খবর জানা গেল, বিষয়টি তা নয়। এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর প্রধান বিবিসিকে জানান, গত শুক্রবার নাতাঞ্জে একদফা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। হামলায় নাতাঞ্জে ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো ‘পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ, সেই বিষয়ে গত রোববার ইরানের পক্ষ থেকে আগের অবস্থান পুর্ণব্যক্ত করা হয়েছে। ৩৫ সদস্যের আইএইএর পর্ষদকে ইসরাইলি হামলার জোরালো প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানিয়েছে তেহরান। ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি গভীরভাবে সুরক্ষিত (বাংকারযুক্ত) একটি স্থাপনা। কেন্দ্রটির অস্তিত্ব প্রথম সামনে আসে ২০০২ সালে। এই স্থাপনার দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় একদফা হামলা হয়েছিল। এদিকে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইরানের কমপক্ষে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৩২০ জনেরও বেশি।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস এ তথ্য জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস আরও বলেছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাকিদের পরিচয় দেয়নি সংস্থাটি। যদিও ইরান এখনো পর্যন্ত ইসরাইলি হামলা চলাকালে নিয়মিতভাবে হতাহতের তথ্য দেয়নি। ইরানের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরাইলি হামলায় ২২৪ জন নিহত ও ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।

Related Articles

Back to top button