দুর্গা বেরা
আমাদের আধুনিক সভ্যতায় মানবিক মূল্যবোধে শিক্ষককে অভিভাবকরা এখন গিভ এন্ড টেক পলিসিতে মূল্যায়ন করি।
ব্যাপারটা এমন- পড়াচ্ছেন তো কি হয়েছে? মাথা কিনে নিয়েছেন? পড়াচ্ছেন তার জন্য পয়সা পাচ্ছেন। এমনি এমনি আর তো পড়াচ্ছেন না?
নিজের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালতে গিয়ে আমারা যার আশ্রয়ে যাই,
জীবনে যখন কেউ থাকেনা, তখন কাজে লাগে শিক্ষা, যা একজন শিক্ষক আমাদের দিয়ে থাকেন। সেসব আর কেউ মনে রাখিনা।
আমরা যার নুন খাই তাকেই খিল্লি করি।
ওটাতে আমরা সিদ্ধহস্ত।
নিজেকে মহান প্রতিপন্ন করার সাচ্চা আদর্শ।
ওটার জন্য কারোর প্রয়োজন হয়না, কোনো শিক্ষক লাগে না।
অনেক দিন পর জনসমক্ষে শিক্ষককে দেখে, তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার যে রেওয়াজ এবং তৃপ্তি, তা আজ উঠে যেতে বসেছে।
এখন ছাত্র মানে- টাকা উপার্জনের মেশিন তৈরি হওয়া,
আর শিক্ষকের কাজ- ঐ মেশিনে পেট্রোল ঢালা।
আমাদের অবস্থাটা এখন– কিছুতো একটা করো, না পারলে এটলিস্ট অপরের সমালোচনা করো।
শিক্ষক হলেন নরম মাটি, যেখানে খুব সহজেই দাগ কেটে বাঘবন্দি খেলা যায়।
কি তাইতো?
আপনিওতো সুযোগ পেলে শিক্ষককে দাঁতে দাঁত রেখে চেবান, আর যদি তিনি হন স্কুলটিচার তাহলে তো কথাই নেই।
তাঁর সম্পর্কে একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে ফেলেন –
যাকে বলে-এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে জীবিত-কালিন শ্রাদ্ধ।
ইনকাম নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েন না। আসে ফাঁকির কথা, তারপরই আসে টিউশনির কথা।
এটা খুবই অন্যায় হচ্ছে, একথাও বলেন।
আর লুকিয়ে লুকিয়ে একজন ভালো স্কুলশিক্ষকের কাছে নিজের সন্তানকে পড়ান। আর যাই হোক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার….., মোটকথা একজন ভালো উপার্জনকারী বানাতেই হবে।
কেউ জানতে চাইলে যা হোক একটা বলে দেবেন, বলবেন- নিজে নিজেই পড়ে নেয়, ওর কোনো টিউশন টিচার নেই।
এখনকার দিনে নৌকো ছাড়া সাঁতরে কে নদী পার হয় বলুন তো?
যার শিক্ষায় আপনিও শিক্ষিত হয়েছেন। তাকে এভাবে বধ্ করতে, উপার্জন নিয়ে কথা বলতে আপনার বিবেকে একটুও বাধে না।
যাঁর জন্য আপনি সমাজে মান পেয়েছেন।
যিনি আপনার জ্ঞানচক্ষু দান করেছেন।
আপনি যার আলোয় লালিত।
আপনি কি চাইবেন, আপনার ইনকাম কেউ ফলাও করে বলুক?
নিশ্চয়ই চাইবেন না।
তেমনি
একজন শিক্ষক, কারো মামার বাড়ির দুধভাত নয়।
আপনার বাড়ির পাশের বাড়ির পল্টু নয়।
রকবাজ রকিও নয়।
শিক্ষক কোনো চচ্চড়ির ডাঁটা নয়, যে- যেমন খুশি চেবাবেন।
একজন শিক্ষক হতে যথেষ্ট যোগ্যতা লাগে।