আশিফুল ইসলান জিন্নাহ্ঃ করোনা আক্রান্ত রোগী এবং মৃত ব্যক্তির প্রতি ভালবাসা এবং সম্মান প্রদর্শন আমাদের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব। একসময় এইডস রোগীকে আমাদের দেশে সামাজিকভাবে ঘৃণা এবং পরিত্যাজ্য মনে করা হোত। আজ একইভাবে করোনা আক্রান্ত রোগী, মৃত ব্যক্তি, তাদের সেবাদানকারী ডাক্তার-নার্স, সেবাকর্মী, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সামাজিকভাবে ঘৃনা প্রদর্শন, বিদ্বেষ পোষন, নাজেহাল, একঘরে করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির জানাজায় পরিজন-আত্নীয়রা যেতে অযথা ভয় পাচ্ছে, যাচ্ছে না এবং বিভিন্ন এলাকায় লোকজন তাদের লাশ কবরস্থানে দাফনে বাঁধা দিচ্ছে। এই ধরনের সামাজিক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে, সামাজিকভাবে নাজেহাল, প্রতিহিংসার শিকার হবার আশংকা, ভয়ে এখন কেউ করোনা আক্রান্ত হলে এই ব্যাপারকে তারা নানাভাবে লুকাচ্ছে এবং লোকলজ্জা, নাজেহাল হবার ভয়ে নিজ বাড়ি, এলাকা ছেড়ে গোপনে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে।
আর এরফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করছে। এভাবে এইসব অতি উৎসাহী, গর্ধপ, অশিক্ষিত, স্বার্থপর, সহিংস, বর্বররা নিজেদের জন্য, সমাজের জন্য আরো বিপদ ডেকে আনছে। তাই এসব ভ্রান্ত, অজ্ঞতাপূর্ণ, অসভ্যতা, অভদ্রতা, অমানবিক চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা, কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য সামাজিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। সমাজ, জাতি এবং রাষ্ট্রের সার্বিক বৃহত্তর স্বার্থে প্রেস-ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, সামাজিক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে যে, করোনা আক্রান্ত হওয়া, টেস্ট করা, চিকিৎসা নেয়া, মারা যাওয়া এবং তাদের চিকিৎসা দেয়া, দাফন করা কোন অপরাধ, লজ্জা, ভয়, পাপ, সংক্রামণ ছড়ানোর ব্যাপার না। অন্যকে আঘাত করা, জীবিত/মৃত ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্যদের সম্মান নষ্ট করা, আত্নসম্মানে আঘাত করা কোন সভ্য, ভদ্র, ধার্মিক মানুষের কাজ হতে পারে না।
প্রথমত আমাদের মহানবী (সাঃ) স্বয়ং বলেছেন, মহামারীর স্থান ছেড়ে কাওকে অন্যত্র চলে না যেতে এবং সেখানে অবস্থান করতে। আর বাইরের কাওকে কোনভাবে মহামারীর স্থানে প্রবেশ না করতে এবং করতে না দিতে। মহামারীর স্থানে এবং মহামারী রোগে যারা মারা যাবেন তাদের জন্য শহীদের সমতুল্য মর্যাদা আছে। দ্বিতীয়ত মৃত মুসলমানের জানাজায় অংশ নেয়া ফরজে কেফায়া। আর ইসলামী রীতি অনুসারে কোন মৃত ব্যক্তির জানাযায় ৫-১০ জন ব্যক্তি অংশ করলেই মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির প্রতি হক আদায় হয়ে যাবে। তৃতীয়ত করোনা মহামারীর বিস্তার রোধে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। সব সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাঙ্গণ, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মত মসজিদগুলো একপ্রকার বন্ধ। স্বাভাবিকভাবে মসজিদে মুসুল্লিদের নিয়মিত গমনাগমন, জামাত করে নামাজ আদায় এবং জানাযা বন্ধ।
তাই যারা মোবাইলে ভিডিও করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ নেবার, জানাযা পড়ার এবং কবর দেয়ার দৃশ্য দেখিয়ে বলছেন/মোবাইলে লেখা উঠছে, ভয়ংকর শেষযাত্রায় সাথে, জানাযা, দাফনের সময় পরিজন-আত্নীয় কেউ নেই; কাওকে পাওয়া যাচ্ছে না। যানবাহন নেই রিক্সায় করে লাশ নিতে হচ্ছে। পুলিশের এম্বুলেন্সে করে পুলিশ লাশ নিয়ে যাচ্ছে কবরস্থানে। ৫-১০ জন হাসপাতালের সেবাকর্মী, পুলিশ সদস্য মিলে জানাযা পড়ে লাশ দাফন করে মোনাজাত করার দৃশ্য। নেপথ্য থেকে বলা হচ্ছে, এমন ধরনের মৃত্যু যেন সহজে কারো নসীবে না হয়। এইসব ওভার স্মার্ট ভাবধারী, অতি উৎসাহী, ইসলাম অজ্ঞ, জ্ঞান পাপী, অসভ্য, বিকারগ্রস্তরা যে সবার অগোচরে/গোপনে/প্রকাশ্যে এই ধরনের বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে কার্যত মৃত ব্যক্তি, মৃত্য ব্যক্তির লাশকে, তার পরিজনদের অসম্মান, অপমান, ছোট করছেন, তাদের মনে কষ্ট দিচ্ছেন, কবীরা গুনাহ এবং অমানবিক কাজ করছেন।
মূলত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে এখনো অনেক দূরে এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে আছে। তাদের এসব অসভ্য, বিকারগ্রস্ত, ইসলাম পরিপন্থী, নৈতিকতা এবং মানবিকতা বিরোধী কার্যকলাপে প্রমাণিত হয় যে, এইসব ব্যক্তির মধ্যে পারিবারিক সুশিক্ষা, রুচিশীল ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা, মনুষ্যত্ববোধ এবং ইসলামী জ্ঞানের অভাব আছে। সমাজের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে এই ধরনের সামাজিকতা এবং মানবতা বিরোধী ভিডিওকারী, ভিডিও শেয়ারকারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার আইনের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া, এদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা এবং শাস্তি দেয়া উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এখন যখন-তখন যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রামণকে স্বাভাবিক হিসাবে গ্রহন করাই আজ সময়ের দাবী এবং কঠিন বাস্ততা। কপি পেস্ট, শেয়ার, কমেন্ট করতে পারেন। ক্রমশ……….. asifultasin18@gmail.com