“ধূলিমগ্ন সাড়ে পাঁচ ফুট অতঃপর মৃত্যুই ঈশ্বর ”
“পথে যেতে যেতে পথ সরে গেলো
সামনে খা খা শূন্যতা
একটু নিখুঁত ভাবে দেখলে-
শূন্যতার ওপারে একটু অানন্দভূবন।
সময় অাসতে না পারায় _ হয়তো বাকি পথটা পাই নি..
[ধ্যানমগ্ন, ধূলিমগ্ন সাড়ে পাঁচফুট ]
বাংলা সাহিত্যে রূপসীবাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতা ভাবনা রবীন্দ্রনাথের জগৎ থেকে সরিয়ে নিয়ে অালাদা অন্য এক জগতে নিয়ে গেছে। সেই কবিতার জীবনবোধ জীবনানন্দের নীজের, হীম কমলা লেবুর করুন মাংসের মত জোছনামাখা ,সে জীবন ইঁদুর- পেঁচার জগৎ, শঙ্খ শালিকের মত অবসাদগ্রস্ত জীবন তবুও ফিরে অাসায় তীব্র অাকুতি তার কবিতার কন্ঠনালী ছিড়ে যায়।
বাংলা সাহিত্যের অনেক পন্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন শূন্য দশকে আসা আধুনিক কবিদের কবিতায় জীবনানন্দের প্রভাব তুমুলভাবে বিদ্যমান ছিলো নিঃসন্দেহে, অপার বিস্তৃত জীবনে অস্তিত্বের ছায়াগুলোকে চিত্রকল্পে কবিতায় রূপদিতে থাকে সমকালের কবিরা।
কবিতার আদ্যপ্রান্ত তখন ক্লেদাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে কবির রেটিনা জুড়ে , কবি সব খুটে নিয়ে লিখে, পথে যেতে যেতে হঠাৎ বাহনের স্থবিরতায় শুন্যতাটুকু নিয়েও কবি লিখে ।
নব্বই দশকের শুরুতেই যে সংখ্যক কবির হাত ধরে বাঙলা সাহিত্যের কবিতার ভাব ধারায় একটি আধুনিক সতন্ত্র অবস্থান পেয়েছিল – সে সমসাময়িক কবিতায় যে জোয়ার আমরা দেখতে পাই, যা শুন্য দশক থেকে প্রথম দশকে এসেও তাদের কবিতা নিয়তই এক নতুনত্বের ছোয়া ক্রমাগত আমাদের দাবড়িয়ে গেছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই ।
শুন্যদশকের আধুনিক কবি পরাগ আজিজ, ২০০৩ সালে বইমেলায় অারিফ নজরুলের মসলিন প্রকাশনি থেকে প্রকাশ পায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ধূলিমগ্ন সাড়ে পাঁচ ফুট কাব্যগ্রন্থ ..
অত:পর গাছেরা জেগে উঠলো
ফুলের গন্ধে ভরে উঠলো পৃথিবী
পাখিরা গাইলো গান,আলো_ আলো জ্বেলে দিলো ঈশ্বর,নোতুন জীবন – একটি অভ্যুত্থান।
আবার নির্জন রাত _ মৃত্যু
মৃত্যুই শুধু পৃথিবী জুড়ে,
মৃত্যুই ঈশ্বর।
[মৃত্যুই ঈশ্বর ]
ব্যক্তি জৗবনে ভৗষন সাদামাটা – অনেকটা আত্মকেন্দ্রৗক সময় সময়ে ; ভাবে পালিয়ে যাওয়া- সবার অগচরে কিংবা সমুদ্র তটে গুটিয়ে যাওয়া কোন শামুকের ন্যায় যে কিনা জোয়ারের কাছে গেলেই যার উচ্ছাস নির্লিপ্ত হয় অতল থেকে অতলে…. আপমস্তকই বলা যায় যার অস্তি মজ্জা জুড়ে কবিতার আলকেমি, ধূলিকনা ঝেড়ে খুঁজেছেন অাত্মপরিচয় নাকি দেয়ালের ক্যানভাসে খুঁজেছেন মৃত্যুর অন্তিম স্বাদ?
সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়ে রাজার মানুষ _
যাদের উচ্ছিষ্ট এখন হাজার নাগরিক, একটু অাশ্রয়, হাঁটা চলা,বধূর শরীর জরানো স্বর্গশূরা।
পুঁজির শরীর ধোয়া শ্রমের ঘাম,শ্রমের ঘাম গড়ে পুঁজির প্রাসাদ।
[খাল বিল হাওড় বাওড় ]
পরাগ আজিজের কবিতায় ফুটে ওঠে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি, কখনো বা কোন ব্যস্ত নগর – সমসাময়িক ব্যক্তি চিন্তাধারা, দেশ, রাজনীতি যা ক্রমশই ঊদগ্রৗব করে তুলে কবিকে সহসা প্রেম-বিরহ-আত্ন যন্ত্রনায় ; অগোচরেই দহনের অবলিলায় রেখে যান কবি অভিমানের করুন স্বাক্ষর :
মানুষ তাকাও; উপরে তাকাও
দ্যাখো, আকাশ দ্যাখো।
মানুষ, একবার মাথা নত করো
দেখো,মৃত্তিকা দ্যাখো।
মৃত্তিকা একদিন পুরোরাই খাবে।
[আত্মবেদী ]
তবে প্রেম অাজন্মই এক অমিমাংশিত অধ্যায় কবির কাছে –
অন্ধকার গাঢ হলে, খুলে যায় সকল নিষিদ্ধতার গিঁট, আমি নিভ’রতায় যত অনুপ্রবেশের দুয়ার খুলে দাও একে একে, বিলিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা চারপাশ
ঘিরে থাকে প্রতিবেশী রুগ্ন নগরী…
বলেছি আমিও বৃষ্টি হবো –
সারা দিন তোমায় ছোব…
এমন বিরহী মুগ্ধতায় কবি বার বার খুজেছেন তার প্রিয়তমাকে তাই লিখেছেন:
এক দিন জলপাই বনে
মনে পরে?
এমন বিরহ দিনে জানালা খুলে দাও
দরোজা খুলে দাও
হৃদয় খুলে দাও…
কবির কবিতায় খুজে পাওয়া যায় তার ফেলে আসা শৈশবের গ্রাম -মফস্বলে তারুন্যের টকবগে দিনগুলো – শৈশবের সেই নদীটির চক চকে জলের কাব্য তাকে দূরারোগ্যের মত করে ভোগায় অাজো , প্রিয় নদীকে নিয়ে লিখেছেন …
মহানন্দার শীতল জলে
আমার দীর্ঘশ্বাস খেলা করে…
আদতে কখনো কবি হারিয়ে যান,কবিতায় ফিরে আসেন, কবিতার আকাশে নক্ষত্র রুপে, মধুর বুননে –
আমি ফিরে আসার আগেই তুমি চলে যাও
তখন মানুষ গুনি –
পথের রেখায় চেয়ে চেয়ে –
সাদা কালো রঙিন মানুষ…
কবি পরাগ আজিজের জন্মদিনে রইলো প্রান ঢালা অভিনন্দন -ভালোবাসা… কবি জীবন ভালো থাকুক সুখে থাকুক।
লেখা ও ছবি : ইমতিয়াজ আহমেদ
লেখক, সংবাদকর্মী।
Imtiazmyn@gmail