টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: সহসা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না চীনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে চীনের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগও কমছে। নতুন করে শিপমেন্টও বন্ধ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেও।
বাংলাদেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ২৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। যার মধ্যে রয়েছে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর উপকরণসহ শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি। আর রফতানিমুখী বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। তাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেখা দেবে কাঁচামাল সংকট, যার প্রভাব পড়বে রফতানি বাণিজ্যে। কাঁচামাল সংকটে দেশের ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধের আশঙ্কা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. এম. আবু তৈয়ব।
শুধু পণ্য আমদানিই নয়, বাংলাদেশ থেকে চীনে রফতানি নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। করোনা সংক্রমণের শুরুতে জাহাজীকরণের পর চীনের বন্দরে আটকে আছে বিভিন্ন পণ্য। আবার বাংলাদেশেও রফতানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রায় ৩শ ধরনের পণ্য রফতানি হয়। যা থেকে বছরে আয় হয় প্রায় ৫ কোটি ডলার। প্রথমে চীনা নববর্ষ ও পরে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে ঋণপত্র খোলা এক প্রকার বন্ধ বলে জানান চীনে মাছ রফতানিকারক সৌমেন্দু বসু।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কমে গেছে চীন থেকে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা। চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজের বেশিরভাগই চীনের। প্রতিমাসে ৪টি শিপিং লেনে ১৯টি জাহাজ সরাসরি চীন থেকে আসে। আর চীন থেকে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে ৭০টি জাহাজ। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছে মাত্র ২টি জাহাজ। এতে কমেছে পণ্যবাহী কন্টেইনারের পরিমাণও। আর যে ২টি জাহাজ এসেছে সেগুলো মূলত ডিসেম্বর বা তার আগে ঋণপত্র খোলা হয়েছিলো।আবার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চীন থেকে আসা জাহাজগুলোকে যাত্রা শুরু থেকে ১৪ দিন অতিবাহিত না হলে বন্দরে
প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কমপক্ষে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরই বন্দরের প্রধান জেটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য দেশ থেকে আসা জাহাজগুলোর ক্ষেত্রে বন্দরে প্রবেশের আগে নাবিক এবং ক্রুদের শারীরিক তথ্য তাদের শিপিং এজেন্টকে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা। সহসা করোনাভাইরাস সংকট না কাটলে দেশের আমদানি-রফতানিখাতে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এদিকে চীনের উহান থেকে উৎপত্তি লাভ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীর কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ১৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজারের বেশি। চীনের মূল ভূখ-ের বাইরে অন্তত ৩০টি দেশে আনুমানিক ৬০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরে এশিয়ার আরও তিন দেশ, ফিলিপাইন, হংকং এবং জাপানে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে এশিয়ার বাইরে গতকাল ফ্রান্সেও এক চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে মিসরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা আর জনমানবশূন্য অ্যান্টার্কটিকা বাদে বিশ্বের পাঁচ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। কোন মহাদেশের কোথায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন সেই চিত্র তুলে ধরা হলো।