এস.এম.নাহিদ, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে-পড়া করোনা মহামারীর কারণে মানব সভ্যতা এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যার ফলে ইতিহাসের বৃহত্তম অর্থনৈতিক মন্দাও দেখা দিতে পারে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, করোনার কারণে চলতি বছরে বাণিজ্য-বিনিময় ১৩ থেকে ২৩ শতাংশ কমে যাবে। বিশ্বে শেয়ার বা মুদ্রা-বাজারগুলোর পতনের ফলে চলতি বছরে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের চেয়েও বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা জানিয়েছে। মহামারী ঠেকাতে সরকারগুলো বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ করতে বাধ্য হবে। তাই বিশ্বে বাণিজ্য ও উৎপাদন বিপুল মাত্রায় কমে যাবে এবং এরই পরিণতিতে বিশ্বে বেকারত্বও বেড়ে যাবে বিপুল হারে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গোতেরেসও বলেছেন, করোনাভাইরাস মানব সভ্যতাকে টার্গেট করেছে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে জাতিসংঘ গঠনের পর বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এটা স্পষ্ট যে কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণে বিশ্ব-অর্থনীতিতে এরই মধ্যে ধস নেমেছে। অচল হয়ে পড়েছে পরিবহন ও পর্যটন শিল্প। বাণিজ্য-নির্ভর দেশগুলোর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া করোনা ভাইরাস দীর্ঘকাল ধরে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে দিনের পর দিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কারণ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে জরুরি নয় এমন সব ধরনের যোগাযোগ ও সমাবেশ আরও বেশ কিছুকাল বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে বিশ্বের মানব-সমাজ। ফলে অর্থনৈতিক তৎপরতা হবে খুবই সীমিত। বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি ও উদীয়মান উন্নত রাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যে করোনার সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধকল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই আগামীতে দরিদ্র দেশগুলোর অবস্থা কতটা খারাপ হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ১৯৩০ সালে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছিল। কিন্তু আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নিরাপদ ব্যবস্থা বজায় রাখার পাশাপাশি করোনার প্রতিষেধক টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার করে এবং বিপুল পরিমাণে উৎপাদন বাড়িয়ে সকল সরকার ও বিত্তবানদের পক্ষ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েই কেবল সমসাময়িক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে। তাই জাতিগুলোর ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত ত্রাণ এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, করোনা বদলে দিতে পারে বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণ এবং জীবন-যাত্রা ও সংস্কৃতির ভূগোল..!